
Oplus_131072
প্রতিনিধি অনুপম পাল,উদয়পুর প্রতিবেদন
ভালোবাসা এমন এক শক্তি, যা মানুষকে অসাধ্য সাধন করতে বাধ্য করে। কিন্তু কখনও কখনও সেই ভালোবাসার বিনিময়ে যা পাওয়া যায়, তা হৃদয় ভাঙার মতো। উদয়পুরের পিত্রা এলাকার গোপাল চন্দ্র দাসের জীবনে যেন ঠিক সেই ঘটনাই ঘটেছে। স্ত্রী শিল্পী দাসের সুখের জন্য নিজের কিডনি বিক্রি করে দেওয়ার পরও, তিনি পেয়েছেন প্রতারণার শিকার হওয়ার দুঃখ।
গোপাল চন্দ্র দাস পেশায় একজন শ্রমিক। দৈনন্দিন খেটে খাওয়া এই মানুষটি সংসারে একটু সুখ আনতে স্ত্রী শিল্পীর সব ইচ্ছে পূরণ করার চেষ্টা করতেন। শিল্পীর আবদার ছিল, তাঁরা যেন কুঁড়ে ঘর ছেড়ে একটি দালান ঘরে থাকতে পারেন। এ কথা শুনে গোপাল তার নিজের কিডনি বিক্রি করে সেই টাকার পুরোটাই তুলে দেন শিল্পীর হাতে। কিন্তু সুখের সংসারের স্বপ্ন দেখে যে টাকা তিনি স্ত্রীর হাতে তুলে দিয়েছিলেন, সেই টাকা নিয়েই শিল্পী নিখোঁজ হয়ে যান।
শেষ তিন দিন ধরে স্ত্রী শিল্পীর কোনো খবর নেই। ভালোবাসার মানুষকে হারিয়ে দিশাহারা গোপাল অবশেষে রাধাকিশোরপুর মহিলা থানার দ্বারস্থ হয়েছেন। পুলিশের কাছে অভিযোগ জানাতে গিয়ে গোপালের চোখে জল আর ঠোঁটে একটাই প্রশ্ন, “আমার কিডনি গেল, ঘর গেল, শিল্পী কোথায় গেল?”
গোপাল চন্দ্র দাসের জীবনের এই ঘটনা একদিকে যেমন দুঃখের, তেমনই অন্যদিকে হাস্যরসেরও। বন্ধুদের কেউ কেউ গোপালকে উপহাস করে বলছে, “ভালোবাসতে গিয়ে শুধু কিডনি নয়, নিজের শান্তি-স্বপ্ন সব বিক্রি করে দিলে। কিন্তু শিল্পী তো শিল্পীর মতোই রয়ে গেল!”
গোপালের এই ঘটনায় এলাকাবাসীর মধ্যেও নানা প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কেউ বলছেন, “স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসা যদি এমন হয়, তাহলে গোপালের মতো মানুষরা শেষ পর্যন্ত একাই কাঁদে।” আবার কেউ মজা করে বলছেন, “কিডনি গেল, কিন্তু দালান ঘরও তো হলো না। এটাই প্রেমের ‘বাইপ্রোডাক্ট’!”
এই ঘটনা আমাদের শুধু হাসায় না, শিক্ষা দেয়—ভালোবাসা অন্ধ হতে পারে, তবে ভালোবাসার আগে নিজের মর্যাদা এবং ভবিষ্যতের কথা ভাবাও দরকার। গোপালের মতো ত্যাগ করা সহজ, কিন্তু সেই ত্যাগের মূল্য দেয়ার মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন।
এখন দেখার বিষয়, পুলিশ গোপালের স্ত্রীকে খুঁজে বের করতে পারে কি না। আর যদি পায়, তবে কি শিল্পী দাস গোপালের কিডনির দামে কেনা ভালোবাসার মর্যাদা রাখবে?