
প্রতিনিধি কৈলাসহর,ঊনকোটি ত্রিপুরা
আজ(৫ই মার্চ,২০২৫) কৈলাসহরের ফ্যাক্টরিজ অ্যান্ড বয়লার্স অর্গানাইজেশন এবং লক্ষ্মী টি কোম্পানি লিমিটেড (মনু-টি ফ্যাক্টরি)-এর যৌথ উদ্যোগে জাতীয় নিরাপত্তা দিবস ও জাতীয় নিরাপত্তা সপ্তাহ উপলক্ষে এক বিশেষ নিরাপত্তা সচেতনতা কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। এই কর্মসূচি মনু-টি ফ্যাক্টরির অফিস গৃহের পার্শ্ববর্তী ময়দানে আয়োজিত হয়, যেখানে কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তার গুরুত্ব এবং শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়।
অনুষ্ঠানের শুভ উদ্বোধন করেন রাজ্যের সমাজ শিক্ষা ও সমাজ কল্যাণ দপ্তরের মন্ত্রী টিংকু রায়। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন—ঊনকোটি জেলা শ্রম আধিকারিক রতন রায়,ঊনকোটি জেলা ফ্যাক্টরিজ অ্যান্ড বয়লার্স-এর প্রধান পরিদর্শক সূর্জ পাল মজুমদার,মনু-টি ফ্যাক্টরির সিনিয়র ম্যানেজার সুমন্ত নারায়ণ পোদ্দার সহ অন্যান্য বিশিষ্ট অতিথি ও শ্রমিক প্রতিনিধি। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন মনু-টি ফ্যাক্টরির সিনিয়র ম্যানেজার সুমন্ত নারায়ণ পোদ্দার।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মন্ত্রী টিংকু রায় বলেন, “শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নই চা শিল্পের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে”।মন্ত্রী জানান, চা শিল্প শ্রমিকদের উপর নির্ভরশীল, কারণ চা পাতা তোলার কাজ মেশিন দিয়ে সম্ভব নয়। মেশিনের ব্যবহারে চা পাতার গুণগত মান নষ্ট হয়ে যায়। তাই শ্রমিকদের সংরক্ষণ করা জরুরি, নতুবা তারা শহরমুখী হয়ে পড়বে, যা চা শিল্পের ভবিষ্যতের জন্য ক্ষতিকারক হয়ে দাড়াবে।
মনু ভ্যালি বাগানের মতো বড় এস্টাবলিশমেন্টে শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষা করা হয়, কিন্তু রাজ্যের অনেক চা বাগানে শ্রমিক সংখ্যা কমে যাচ্ছে এবং শ্রমিকদের কল্যাণমূলক কার্যক্রম যথাযথভাবে পরিচালিত হচ্ছে না। তিনি এ বিষয়ে পর্যালোচনার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন।
মন্ত্রী শ্রমিকদের আর্থিক সমস্যা ও প্রভিডেন্ট ফান্ড (PF) নিয়ে উদ্ভূত সমস্যার দিকেও আলোকপাত করেন। তিনি বলেন,একসময় শ্রমিকরা ম্যানুয়ালি প্রভিডেন্ট ফান্ড পেতেন, কিন্তু বর্তমানে আধার লিঙ্ক করার কারণে অনেক শ্রমিক টাকা তুলতে পারছেন না।
অনেক শ্রমিক প্রয়োজনীয় তথ্য ও নির্দেশনার অভাবে তাদের নির্মাণ শ্রমিক কার্ড পুনর্নবীকরণ (Renew) করতে পারছেন না।মন্ত্রী মনে করিয়ে দেন যে সরকারি দপ্তরের আধিকারিক ও কোম্পানির মালিকদের উচিত সহানুভূতির দৃষ্টিতে শ্রমিকদের সহায়তা করা।
মন্ত্রী বলেন, “যদি আমরা শ্রমিকদের সমস্যাগুলি মানবিকভাবে না দেখি, তবে তারা আমাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে এবং শহরমুখী হবে। এতে অনেক শিল্প বন্ধ হয়ে যাবে।”
জাতীয় নিরাপত্তা দিবস ও নিরাপত্তা সপ্তাহের মূল বার্তা ছিল কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। নিরাপত্তা শুধুমাত্র একটি নিয়ম নয়, এটি আমাদের নৈতিক কর্তব্য। কর্মক্ষেত্রে শ্রমিকদের নিরাপত্তা বিধান করা হলে তবেই একটি সুস্থ ও সফল কর্মপরিবেশ গড়ে তোলা সম্ভব।”পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে শ্রমিক সংকটের কারণে বহু কলকারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। তাই আমাদের অবশ্যই শ্রমিকদের স্বার্থরক্ষা করতে হবে এবং তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে, নাহলে চা শিল্প ধ্বংস হয়ে যেতে পারে।”
এই নিরাপত্তা সচেতনতা কর্মসূচির মাধ্যমে শ্রমিকদের কল্যাণ ও কর্মক্ষেত্রের সুরক্ষা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়। শ্রমিকদের চাহিদা ও সুবিধাগুলি বিবেচনা করে নীতি প্রণয়ন করা হলে শ্রমিকরা বাগানমুখী হবেন এবং চা শিল্প টিকে থাকবে। নিরাপদ কর্মপরিবেশ তৈরি করা শুধু আইনগত বাধ্যবাধকতা নয়, এটি আমাদের সকলের নৈতিক দায়িত্ব।