
প্রতিনিধি অনুপম পাল
কৈলাসহর,ঊনকোটি ত্রিপুরা
কৈলাসহর, ত্রিপুরার অন্যতম প্রাচীন মহকুমা, যার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য নিয়ে গর্ব করার মতো অনেক কিছু আছে। কিন্তু বর্তমানে এই শহরের শান্তি এবং আইন-শৃঙ্খলা চরমভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে এক প্রভাবশালী দুর্নীতিবাজের দৌরাত্ম্যে। পাইতুরবাজার এলাকায় সদ্য খোলা বিলেতি মদের দোকানটি নিয়ে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসছে, যা স্পষ্টতই বেআইনি কার্যকলাপের প্রমাণ বহন করছে।
অসমর্থিত সূত্রের খবর অনুযায়ী, এই মদের দোকানের জন্য যে জায়গায় লাইসেন্স ইস্যু করা হয়েছিল, মালিক তা উপেক্ষা করে পাইতুরবাজারে অবৈধভাবে দোকান খুলেছেন। শুধু তাই নয়, রাজ্য বিদ্যালয় শিক্ষা দপ্তরের নিয়ম অনুযায়ী বিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী এলাকায় নেশাজাতীয় দ্রব্য বিক্রি নিষিদ্ধ থাকলেও, দোকানটি খোলা হয়েছে একদম বিদ্যালয়ের মাঠের বিপরীতে! এটা কেবল নিয়ম ভঙ্গ নয়, শিশুদের ভবিষ্যৎ ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র।
স্থানীয় বাসিন্দারা দীর্ঘদিন ধরে এই অনৈতিক কাজের প্রতিবাদ করতে চাইছিলেন, কিন্তু ক্ষমতার দাপটে তারা মুখ খুলতে পারেননি। কারণ এই দোকানের মালিক ভট্টাচার্যী বাবু, যিনি প্রাক্তন বাম মন্ত্রীর(রুমাল মন্ত্রী নামেও পরিচিত) বিশ্বস্ত পেয়াদা তার ছত্রছায়ায় বছরের পর বছর অবৈধ ব্যবসা করে আসছেন।
সাধারণ মানুষের প্রশ্ন, এত বড় আইন ভাঙার পরেও প্রশাসন নীরব কেন? স্থানীয়দের অভিযোগ, বর্তমান শাসক দলের দুই প্রভাবশালী নেতাকে ৫ লক্ষ টাকা ঘুষ দিয়ে এই দোকানের লাইসেন্স হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। যার ফলে প্রশাসন ইচ্ছাকৃতভাবে সব অনিয়মের চোখ বুজে বসে আছে। জেলা আবগারি দপ্তর থাকা সত্ত্বেও এই বেআইনি কার্যকলাপ দিনের আলোয় চলতে থাকলেও, কোনো তদন্তের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
গতকাল রাতে দুই ক্রেতা, একটি বিশেষ ব্র্যান্ডের মদ কিনতে গিয়ে দেখতে পান বোতলের গায়ে থাকা এমআরপি, ব্যাচ নম্বর ও উৎপাদনের তারিখ একটি সাদা স্টিকারের মাধ্যমে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনা স্পষ্টতই ইঙ্গিত করে যে, এই দোকানে নকল বা নিম্নমানের মদ বিক্রি করা হচ্ছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য ভয়ংকর ।
সাংবাদিকরা যখন আবগারি দপ্তরে গিয়ে এ বিষয়ে জানতে চান, তখন সুপারিনটেনডেন্ট গায়েব! ইন্সপেক্টর সাহেবও মুখে কুলুপ এঁটে বসে থাকলেন, সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরার সামনে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হলেন না। তাহলে কি এই দপ্তরও ওই পাঁচ লক্ষ টাকার ভাগ পেয়েছে?
এই দোকানের বিরুদ্ধে এত অভিযোগ থাকার পরেও প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি, যা জনগণের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। স্থানীয়রা জানতে চায়—প্রাক্তন মন্ত্রীর পেয়াদা এই দৌরাত্ম্য চালিয়ে যেতে পারছে কীভাবে?আইন কী কেবল সাধারণ মানুষের জন্য, ক্ষমতাশালীদের জন্য নয়?বিদ্যালয়ের সামনে মদের দোকান কীভাবে চলতে পারে?ঘুষখোর প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতারা আর কতদিন এই অনৈতিক কাজের সুরক্ষা দেবে? স্থানীয় বাসিন্দারা অবিলম্বে তদন্ত ও কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। এই মদের দোকানের লাইসেন্স বাতিল করে মালিক ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। প্রশাসনের এই ন্যাক্কারজনক নীরবতা যদি বজায় থাকে, তাহলে জনগণের আন্দোলন ছাড়া আর কোনো পথ খোলা থাকবে না।সরকার কি এবার চোখ খুলবে, নাকি আবারও দুর্নীতির আঁচলে মুখ ঢেকে রাখবে?