
Oplus_131072
প্রতিনিধি অনুপম পাল,কৈলাসহর
কৈলাসহরের পাখিরবাদা গ্রামে এক নারীর উপর নারকীয় অত্যাচার চালিয়ে দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে অভিযুক্ত, আর প্রশাসন যেন নীরব দর্শকের ভূমিকায়! সরকারি স্কুলের শিক্ষিকা রুখিয়া বেগম (২৬) ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন, কিন্তু সেই সম্পর্ক পরিণত হয়েছে তার জন্য মরণফাঁদে। প্রতারণার শিকার হয়ে ডিভোর্স কেইস ফাইল করার পর থেকেই একের পর এক হুমকি, হত্যাচেষ্টা—প্রমাণ সহ প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানালেও এখনো পর্যন্ত অভিযুক্ত আব্দুল জলাল গ্রেফতার হয়নি!
পাখিরবাদার বাসিন্দা রুখিয়ার জন্ম থেকে পরিবারে অভাব-অনটন। ২০১৮ সালে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্স করে ২০২১ সালে টেট উত্তীর্ণ হয়ে ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে সরকারি শিক্ষিকা হিসেবে যোগ দেন। কৈলাসহরের পশ্চিম ইয়াজিখাওড়ার বাসিন্দা আব্দুল জলালের সঙ্গে ফোনে পরিচয় হয় তার, প্রেম গড়ে ওঠে। অবশেষে ২০২৫ সালের ২০ জানুয়ারি আদালতে রেজিস্ট্রি করে বিয়ে করেন তারা।
কিন্তু ক’দিন পরই সামনে আসে জলালের আসল রূপ। জানা যায়, আগেও সে দুটি বিয়ে করেছে এবং তার চার-পাঁচটি সন্তানও রয়েছে। প্রতারিত হয়ে রুখিয়া ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ আদালতে ডিভোর্স ফাইল করেন। এটাই ছিল তার সবচেয়ে বড় ‘অপরাধ’। এরপর থেকেই শুরু হয় ভয়াবহ অত্যাচার।
১৯ ফেব্রুয়ারি গভীর রাতে, বাড়ির বাইরে গেলে আচমকা আব্দুল জলালের আক্রমণ। ধারালো দা দিয়ে রুখিয়ার মাথায় এলোপাতাড়ি কোপ। গ্রামবাসীরা এসে উদ্ধার না করলে সেদিনই প্রাণ হারাতেন তিনি। গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হলে মাথায় ৮টি সেলাই লাগে।
২০ ফেব্রুয়ারি তার বাবা কৈলাসহর মহিলা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ মামলা রেজিস্ট্রি করলেও আজও অভিযুক্ত অধরা!
চিকিৎসার পর কিছুটা সুস্থ হয়ে ৩ মার্চ রুখিয়া স্কুলে যোগ দেন। কিন্তু আততায়ী এত সহজে পিছু হটবে কেন? ফের ফোনে হুমকি—
“আগামী ১৫ দিনের মধ্যে তোকে মেরে ফেলবো!” এই হুমকির রেকর্ডিং পুলিশের হাতে তুলে দিলেও আজ পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
স্থানীয়দের দাবি, আব্দুল জলাল প্রকাশ্যেই ঘুরছে, অথচ পুলিশ তাকে খুঁজে পাচ্ছে না! প্রশাসনের এই রহস্যজনক নিষ্ক্রিয়তায় প্রশ্ন উঠছে— আইন কি শুধু কাগজে-কলমে?
রুখিয়া আজ নিজের বাড়িতেও থাকতে পারছেন না। মায়ের মানসিক অবস্থা ভালো নয়, বাবা বৃদ্ধ ও অসুস্থ। এই অবস্থায় আতঙ্কে গ্রামের একদিন এক বাড়িতে, পরের দিন অন্য বাড়িতে লুকিয়ে কাটাচ্ছেন তিনি।
একজন সরকারি শিক্ষিকা, সমাজের আলোকবর্তিকা— অথচ নিজেকে বাঁচানোর জন্য মুখ্যমন্ত্রীর কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করতে হচ্ছে! এটাই কি আইনের সুশাসন?
প্রশ্ন উঠছে— এটাই কি নারীর নিরাপত্তার বাস্তবচিত্র? যেখানে নির্যাতিতাকে বাঁচতে লুকিয়ে থাকতে হয়, আর অপরাধী প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ায়? স্থানীয়রা বলছেন আজ যদি রুখিয়ার জন্য আমরা আওয়াজ না তুলি, কাল হয়তো আরেকজন রুখিয়া প্রাণ হারাবে। নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা রুখতে প্রশাসনের এই নিষ্ক্রিয়তা চলবে আর কতদিন?