
Oplus_131072
প্রতিনিধি ,কৈলাসহর
কৈলাসহরে বালি মাফিয়াদের দৌরাত্ম্য কোনো নতুন বিষয় নয়। বছরের পর বছর ধরে চলে আসা এই অবৈধ কার্যকলাপ বন্ধ করার জন্য একাধিক অভিযোগ জানানো হলেও, প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা আজও স্পষ্ট। ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী ব্রীজ থেকে মাত্র ৩ দশমিক ৭১ মিটার দূরে মুসলিমপল্লী এলাকায় প্রতিদিন অবৈধভাবে বালি উত্তোলন চলছে নির্লজ্জভাবে।
ভারতের পরিবেশ সুরক্ষা আইন অনুযায়ী , ১৯৮৬ এবং মাইনিং অ্যান্ড মিনারেলস (ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড রেগুলেশন) অ্যাক্ট, ১৯৫৭ অনুযায়ী, বালু উত্তোলনের ক্ষেত্রে বিশেষ কিছু বিধিনিষেধ রয়েছে। কোনো সেতুর ৫০০ মিটারের মধ্যে,জল সরবরাহ প্রকল্পের উজান ও ভাটিতে ২০০ মিটার, জাতীয় মহাসড়ক ও রেললাইনের প্রান্ত থেকে ২০০ মিটার, জলাধার, খাল/সেচ প্রকল্প বা ভবন থেকে ১০০ মিটার, রাজ্য মহাসড়কের প্রান্ত থেকে ৫০ মিটার এবং অন্যান্য রাস্তার প্রান্ত থেকে ৩০ মিটারের মধ্যে খনন কার্যক্রম পরিচালনা করা যাবে না। কিন্তু কে শোনে কার কথা। বিপরীত মূখি কৈলাসহরেযে ”সবাই রাজা।”
স্থানীয় প্রায় ২০ পরিবারের অভিযোগ, চারটি বালি উত্তোলনের মেশিন দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৪০ গাড়ি বালি উত্তোলন করা হচ্ছে। যার বাজার মূল্য আনুমানিক প্রতি গাড়ি ৪ হাজার টাকা। ফলে একদিনে বালি মাফিয়াদের পকেটে ঢুকছে প্রায় ১ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা, আর মাস শেষে দাঁড়াচ্ছে ৪৮ লক্ষ টাকা! বাৎসরিক হিসেবটা প্রায় ৬ কোটি। বিশ্বস্ত সুত্র মারফত খবর এই বিশাল অঙ্কের মধ্যে ভাগীদার অনেকেই। আর তাই এরা নীরব দর্শক। অর্থাৎ, অর্থের বিনিময়ে এই অবৈধ কর্মকাণ্ডকে বৈধতার রূপ দেওয়া হচ্ছে।
এদিকে, লাগাতার বালি উত্তোলনের ফলে মুসলিমপল্লী এলাকার প্রায় ২০টি পরিবার এখন চরম বিপদের সম্মুখীন। নদীভাঙনের আশঙ্কায় আতঙ্কে দিন কাটছে তাঁদের। বালি উত্তোলনের ফলে নদীর গতিপথ পরিবর্তিত হচ্ছে, মাটি ক্ষয়ে গিয়ে বসতভিটা ধসে পড়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। আগামী বর্ষার মরশুমে এই ক্ষতির মাত্রা আরও ভয়াবহ আকার নিতে পারে বলে স্থানীয়দের ধারণা।
স্থানীয় বাসিন্দারা একাধিকবার ঊনকোটি জেলার জেলা শাসক দীলিপ কুমার চাকমা, মহকুমা শাসক, বনদপ্তর সহ প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন। কিন্তু কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। বরং, বিপুল পরিমাণ ঘুষ দিয়ে বালি মাফিয়ারা পুরো প্রশাসনকে “সেটিং” করে রেখেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা মকলিস মিয়া বলেন, “দীর্ঘ দুই বছর ধরে এই অবৈধ বালি উত্তোলন চলছে। প্রশাসন সব জানে, কিন্তু কেউ আমাদের কথা শুনছে না। অভিযোগ করেও কোনো লাভ হচ্ছে না। আমরা আতঙ্কে আছি। প্রশাসন যদি দ্রুত ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে আমাদের ঘরবাড়ি নদীর গর্ভে তলিয়ে যাবে।”
সাধারণ মানুষের জীবন যখন চরম সঙ্কটে, তখন প্রশাসনের এই নিষ্ক্রিয়তা স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত করে, আইনের শাসনের পরিবর্তে টাকার শাসন চলছে। যেখানে মানুষের দুর্ভোগের চেয়ে অবৈধ আয়ের ভাগ বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তবে অনেকেই আবার তথা কথিত কিছু নামধারি সমাজ সেবকের বিরুদ্ধেও অভিযোগ তুলেছেন।
তবে, স্থানীয়রা এখন আর চুপ করে বসে থাকতে চান না। প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তার কারণে তাঁরা এবার ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইবুনাল (NGT)-এ যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যদি সরকার ও প্রশাসন এখনই কঠোর ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে শুধু এই ২০টি পরিবার নয়, ভবিষ্যতে আরও বহু পরিবার ভয়াবহ বিপদের সম্মুখীন হবে।
প্রশ্ন হল—কবে জাগবে প্রশাসন? কবে বন্ধ হবে এই অবৈধ বালি উত্তোলন? নাকি কিছু মানুষের লোভের কারণে হাজারো পরিবারকে নদীর গর্ভে বিলীন হতে হবে? এখন দেখার বিষয় জেলা শাসক,বন দপ্তর কত দ্রুত এই অবৈধ বালি উত্তলনের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেন।