
Oplus_0
প্রতিনিধি অনুপম পাল,কৈলাসহর
কৈলাসহরের গৌরনগর ব্লকের অন্তর্গত দেওরাছড়া এডিসি ভিলেজের তিন নম্বর ওয়ার্ডে অবস্থিত বাঘাছড়া গ্রাম বর্তমানে চরম দুর্ভোগে দিন কাটাচ্ছে। প্রবল বর্ষণের কারণে পাহাড় ধসে এবং রাস্তা ভেঙে পড়ায় গত এক সপ্তাহ ধরে গ্রামবাসীরা কার্যত অবরুদ্ধ অবস্থায় রয়েছেন। প্রায় একশো পরিবারে বাস করা এই গ্রামে যাতায়াতের জন্য মাত্র একটি ইট সলিং রাস্তা রয়েছে, যেটি বর্তমানে সম্পূর্ণ অচল হয়ে পড়েছে।
বাঘা ছড়ার পাশ ঘেঁষে থাকা এই রাস্তা বহুদিন ধরেই সংস্কারের অভাবে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ছিল। বিগত কয়েক বছরের ধারাবাহিক বৃষ্টিতে রাস্তার একপাশ ধসে পড়েছে ছড়ার অতিরিক্ত জলের চাপে, অন্যপাশে পাহাড় থেকে নেমে আসা মাটি চাপা দিয়েছে রাস্তার উপরাংশ। ফলে যান চলাচল তো দূরের কথা, পায়ে হেঁটে চলাও কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, বারবার পূর্ত দপ্তর ও প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানিয়েও কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। পূর্ত দপ্তরের তরফে তিন বছর ধরে একাধিকবার রাস্তার মাপজোক করা হলেও এখনো পর্যন্ত কোনো কাজ শুরু হয়নি। যদিও পূর্ত দপ্তরের নথিতে এই রাস্তার নাম রয়েছে ‘বাঘাইছড়া ওয়েনজিসি কলোনি’ হিসেবে, তবু বরাদ্দ নেই উন্নয়নের।
এই পরিস্থিতিতে গ্রামের ছাত্রছাত্রীরা স্কুলে যেতে পারছে না, অসুস্থদের শহরের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া যাচ্ছে না। অনেকেই প্রাইভেট ফাইনান্সে অটো বা ই-রিক্সা কিনে জীবিকা নির্বাহ করতেন, এখন রাস্তা বন্ধ থাকায় তাদের রোজগারও বন্ধ হয়ে গেছে, ফলে মাসিক কিস্তি পরিশোধ করাও অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
রবিবারের প্রবল বৃষ্টিপাতে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নেয়। রাস্তা ভেঙে পড়ার পাশাপাশি বাঘা ছড়ার জল ঢুকে পড়েছে গ্রামের কৃষিজমি ও সবজির খেতে, কৃষকরাও ক্ষতিগ্রস্ত।
উপায় না পেয়ে গ্রামবাসীরা নিজেরাই অস্থায়ীভাবে রাস্তা পরিষ্কার ও সংস্কারের কাজে হাত লাগিয়েছেন। গৌরনগর বিডিও ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিদর্শন করলেও জানিয়েছেন যে, তাঁর কাছে রাস্তা সংস্কারের জন্য কোনো তহবিল নেই।
অপরদিকে, রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকা নিয়েও ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীরা। তাঁরা অভিযোগ করছেন, ভোটের সময় রাজনৈতিক নেতারা গ্রামে গিয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়ে যান, কিন্তু পরে কেউ খবর নেয় না।গ্রামবাসীরা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন—যদি দ্রুত পাহাড় কেটে রাস্তা প্রশস্তকরণ এবং বাঘা ছড়ার ধারে গার্ড ওয়াল নির্মাণের কাজ শুরু না হয়, তাহলে তারা প্রশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবেন।
কৈলাসহর শহর থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরের এই গ্রামে প্রশাসনিক উদাসীনতা ও রাজনৈতিক নিস্ক্রিয়তা এক করুণ চিত্র তুলে ধরেছে—যেখানে নাগরিক জীবনের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা এখনো শুধুই কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ।