
সংবাদ প্রতিনিধি। অনুপম পাল। কৈলাসহর
শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড—এই মূলমন্ত্রকে সামনে রেখে চন্ডীপুর মণ্ডলের ভারতীয় জনতা যুব মোর্চার উদ্যোগে তৃতীয় বারের মতো অনুষ্ঠিত হলো কৃতি ছাত্রছাত্রী সংবর্ধনা অনুষ্ঠান “নব স্বপ্নের উড়ান ২০২৫”। ২০২৩ সাল থেকে শুরু হওয়া এই কর্মসূচি ইতিমধ্যেই এক সামাজিক দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে, যা শুধু সংবর্ধনা প্রদান নয়, বরং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে অনুপ্রেরণা জোগানো ও রাষ্ট্রীয় চেতনায় উদ্বুদ্ধ করার এক অভিনব প্রয়াস।
অনুষ্ঠানের সূচনায় বিশ্ব শান্তির বার্তা ছড়িয়ে পড়ার প্রতীক স্বরূপ মুক্ত আকাশে শান্তির পারাবত উড়িয়ে দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানটি আয়োজিত হয় শ্রীরামপুর স্বামী বিবেকানন্দ ভবনে এবং এতে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক নেতৃত্বরা। মঞ্চে ছিলেন চন্ডীপুরের বিধায়ক ও মন্ত্রী টিংকু রায়, যুব মোর্চার প্রদেশ সভাপতি বিধায়ক সুশান্ত দেব, জেলা বিজেপি সভাপতি বিমল কর, যুব মোর্চা জেলা সভাপতি অরূপ ধর, প্রদেশ মুখপাত্র অম্লান মুখার্জি, মণ্ডল সভাপতি পিন্টু ঘোষ এবং স্থানীয় সমিতির চেয়ারপার্সন সম্পা দাস পাল।
চন্ডীপুর যুব মোর্চার মণ্ডল সভাপতি বাবলু দেব জানান, এই অনুষ্ঠান শুধু সংবর্ধনার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এটি এক সামাজিক বার্তা। কৃতী ছাত্রছাত্রীদের স্বীকৃতি প্রদানের মাধ্যমে তাঁদের অধ্যবসায়, নিষ্ঠা ও একাগ্রতাকে সম্মান জানানো হয় এবং এই বার্তাও পৌঁছে দেওয়া হয়—তাঁদের পাশে যুব মোর্চা সর্বদা আছে ও থাকবে।
বক্তব্য রাখতে গিয়ে বিধায়ক সুশান্ত দেব বর্তমান প্রজন্মকে কেবল মোটিভেট করাই নয়, সমাজের কিছু গভীর সমস্যার দিকেও দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। বিশেষত নেশা, বাল্যবিবাহ ও বৃদ্ধাশ্রম সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসার কথা বলেন তিনি। পাশাপাশি তিনি গুরুজনদের প্রতি শ্রদ্ধা ও মা-বাবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের মূল্যবোধ শেখার আহ্বান জানান।
মন্ত্রী টিংকু রায় তাঁর বক্তব্যে রাজ্যের শিক্ষাক্ষেত্রে চলমান ইতিবাচক পরিবর্তনগুলোর উপর আলোকপাত করেন। তিনি জানান, জাতীয় শিক্ষানীতির বাস্তবায়নের ফলে রাজ্যের বিভিন্ন বিদ্যালয়ে সাংস্কৃতিক ও সৃজনশীল কার্যক্রম যেমন—সঙ্গীত, যোগা, নাটক, আবৃত্তি ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। রাজ্যের প্রতিটি গ্রন্থাগারকে পুনরুজ্জীবিত করে ১০ কোটি টাকা মূল্যের নতুন বই সংগ্রহ করা হয়েছে। বিদ্যালয় সংস্কারের জন্য ইতিমধ্যে রামকৃষ্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ভদ্রপল্লী উচ্চ বিদ্যালয় এবং রাম কমল এইচএস স্কুলের জন্য ৩৩ কোটি টাকার বরাদ্দ করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া ছাত্রছাত্রীদের জন্য “সিএম সাথ প্রকল্প” চালু করা হয়েছে, যার অধীনে মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক স্তরের ছাত্রছাত্রীদের প্রতি মাসে ৫,০০০ টাকা করে তিন বছর ধরে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। পাশাপাশি দৃষ্টিহীন ও শারীরিকভাবে অক্ষম শিক্ষার্থীদের জন্যও বিশেষ সুবিধা রয়েছে। এছাড়াও প্রি-মেট্রিক স্কলারশিপ, বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও প্রকল্পের মাধ্যমে বহু কন্যা সন্তানের শিক্ষা ও চিকিৎসা ব্যয় বহন করছে সরকার।
অনুষ্ঠানে উঠে আসে রাজ্যের ক্রীড়াক্ষেত্রেও মেয়েদের অগ্রগতির বিষয়। গোলকপুর চা বাগানের মত প্রান্তিক অঞ্চল থেকেও কিশোরীরা আজ জাতীয় ক্রীড়ামঞ্চে কৃতিত্বের ছাপ রেখে চলেছে, যা রাজ্যের সামাজিক অগ্রগতির একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক।
এই দিনে চন্ডীপুর বিধানসভা এলাকার বিভিন্ন বিদ্যালয়ের প্রায় তিন শতাধিক মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ছাত্রছাত্রীকে সংবর্ধিত করা হয়। ফার্স্ট ও সেকেন্ড ডিভিশনে উত্তীর্ণদের পাশাপাশি মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরের শ্রেষ্ঠ দশ জন কৃতীকে বিশেষ সম্মান ও উপহার প্রদান করা হয়।