
Oplus_0
প্রতিনিধি অনুপম পাল। কৈলাসহর
আজ দূষণ বিশ্বজুড়ে মানব সভ্যতার অস্তিত্বের অন্যতম বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই বাস্তবতায় ত্রিপুরা রাজ্যও ব্যতিক্রম নয়। আগরতলা ইতোমধ্যেই ভারতের অন্যতম দূষিত শহরের তালিকায় উঠে এসেছে। রাজধানী ছাড়াও রাজ্যের অন্যান্য শহর ও মহকুমাগুলিতে ক্রমবর্ধমান যানবাহনের চাপ, দাহ্য পদার্থ ব্যবহারে বৃদ্ধি এবং সবুজ অঞ্চল ধ্বংস—এই সব মিলিয়ে রাজ্যের পরিবেশ ব্যবস্থাকে নিত্যদিন হুমকির মুখে ফেলছে।
বর্তমান ডিজিটাল ও যান্ত্রিক নির্ভর জীবনে মানুষের মধ্যে শারীরিক গতিশীলতা হ্রাস পেয়েছে। অফিসকেন্দ্রিক জীবন, ইলেকট্রনিক গ্যাজেটের প্রতি অতিরিক্ত নির্ভরতা, এবং একরকম অলস জীবনধারা কেবল শারীরিক নয়, মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরও ভয়াবহ প্রভাব ফেলছে। গবেষণা বলছে, বর্তমানে চাকরিজীবী ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, স্থূলতা ও উদ্বেগজনিত রোগ ছড়িয়ে পড়েছে মূলত শারীরিক নিষ্ক্রিয়তার জন্য।এই অবস্থায় পরিবেশ সচেতনতা ও নাগরিক স্বাস্থ্য রক্ষায় সাইকেল চালানোর মতো একটি সহজ, প্রাকৃতিক ও কার্যকর উপায় গ্রহণের এখনই সময়।
অফিস যাত্রীদের জন্য সাইকেল এবং সাধারণ নাগরিকদের জন্য ই-সাইকেল ও ই-যান চালু করা রাজ্যের জন্য এক দূরদর্শী ও বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ হতে পারে। স্বল্প দূরত্বের জন্য ব্যক্তিগত যানবাহনের পরিবর্তে যদি সরকারি কর্মচারী, জনপ্রতিনিধি, এমনকি মন্ত্রীরা পর্যন্ত সাইকেল ব্যবহার করেন, তবে শুধু জ্বালানি খরচ সাশ্রয়ই নয়, রাজ্যের দূষণমাত্রাও দৃশ্যমানভাবে হ্রাস পাবে।
নেদারল্যান্ডস, ডেনমার্ক ও বেলজিয়ামের মতো দেশগুলোতে প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত সাইকেল চালিয়ে অফিসে যান। সেই দেশগুলিতে শহরের ৩০ শতাংশেরও বেশি মানুষ দৈনন্দিন যাতায়াতে সাইকেল ব্যবহার করেন। এর ফলে সেখানে দূষণ ও যানজট দুই-ই কমেছে। ভারতের মতো জনবহুল দেশে এমন অনুশীলন অবশ্যই সম্ভব, বিশেষ করে ছোট ও মধ্যম শহরগুলোতে।
ত্রিপুরা এক সময় ছিল প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর এক সবুজ রাজ্য। কিন্তু আজকের দিনে বনভূমি সঙ্কোচন, বায়ুদূষণ ও জলদূষণের কারণে সেই সবুজ ঐতিহ্য হারাতে বসেছে। যানজট, সড়ক দুর্ঘটনা, এবং জ্বালানির অতিরিক্ত ব্যবহার আমাদের পরিবেশ ও সম্পদ উভয়কেই ক্ষতিগ্রস্ত করছে। অথচ স্বল্প দূরত্বের মধ্যে যদি সাইকেল চালানো বাধ্যতামূলক করা যায়, তবে পরিবেশ বাঁচানোর সঙ্গে সঙ্গে প্রাণও রক্ষা পাবে।
সরকার যদি আন্তরিকভাবে পরিবেশ রক্ষা করতে চায়, তবে তাকে প্রথম পদক্ষেপ নিতে হবে নিজেই—মন্ত্রিসভার সদস্যদের সাইকেল চালিয়ে দপ্তরে আসার সংস্কৃতি তৈরি করতে হবে। এতে একদিকে যেমন রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রতিষ্ঠিত হবে, অন্যদিকে সাধারণ মানুষও অনুপ্রাণিত হবে।
এই উদ্যোগ যদি সমস্ত সরকারি দপ্তরে প্রাথমিকভাবে পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হয় এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশিকা জারি করা হয়, তবে মাত্র এক মাসের মধ্যেই রাজ্যের বাতাসে দূষণের মাত্রা কমবে, স্বাস্থ্যবিধি বাড়বে এবং সাশ্রয়িত অর্থ দিয়ে পরিবেশ প্রকল্প বা অবকাঠামো উন্নয়ন সম্ভব হবে।
পরিবেশ রক্ষায় এই ক্ষুদ্র পদক্ষেপই হয়ে উঠতে পারে বৃহৎ পরিবর্তনের বীজ। ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে সাইকেল চালানোর অভ্যাস গড়ে তুললে সামাজিক বিভাজন কমবে, স্বাস্থ্য ঠিক থাকবে এবং বিলাসবহুল জীবনের অন্ধ প্রতিযোগিতাও কমবে।
রাজ্য সরকার যদি সত্যিই ত্রিপুরাবাসীর কল্যাণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়, তবে এখনই সময় সাহসী সিদ্ধান্ত নেওয়ার। সাইকেল চালু হোক প্রতিটি অফিসে, বিদ্যালয়ে, দপ্তরে—ত্রিপুরা ফিরিয়ে পাক তার সবুজ প্রাণ, তার টেকসই ভবিষ্যৎ।