
নিজস্ব প্রতিনিধি‘আগরতলা, ত্রিপুরায় নেশামুক্ত রাজ্যের স্লোগান তুলে শাসক দল যতোই প্রচার চালাক, বাস্তব চিত্র যেন তার সম্পূর্ণ বিপরীত। প্রজাতন্ত্র দিবসের সরকারি ছুটির দিনেও প্রশাসনিক নির্দেশ উপেক্ষা করে অবাধে বিলেতি মদ বিক্রির ঘটনা সামনে এসেছে। আগরতলার বামুটিয়ার কালিবাজারের একটি মদের দোকানে পেছনের দরজা দিয়ে চড়া দামে মদ বিক্রির প্রক্রিয়া ধরা পড়ে সাংবাদিকদের ক্যামেরায়।
২৬ জানুয়ারি প্রজাতন্ত্র দিবস উপলক্ষে সরকারি নির্দেশ ছিল, সমস্ত বিলেতি মদের দোকান বন্ধ থাকবে। কিন্তু কালিবাজারের ওই মদের দোকানে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত পেছনের দরজা দিয়ে কয়েক লক্ষ টাকার মদ বিক্রি হয়। এলাকার বাসিন্দারা বিষয়টি প্রত্যক্ষ করলেও ভয় এবং প্রতিক্রিয়ার ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস করেননি। এদিকে, প্রশাসনিক কর্তারা নগদ প্রণামী নিয়ে নিশ্চুপ থাকার অভিযোগ উঠেছে।
এক্সাইজ ডিপার্টমেন্টের দায়িত্বহীনতার কারণে নেশার কারবারীরা আরও সাহস পাচ্ছে বলে মনে করেন সাধারণ মানুষ। সরকারি নির্দেশ অমান্য করে মদ বিক্রির ঘটনা দপ্তরের গাফিলতি এবং প্রশাসনিক দুর্বলতাকেই স্পষ্ট করে তুলেছে।
বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিলেতি মদের দোকানগুলির সাপ্তাহিক বন্ধের নিয়ম তুলে দেওয়ার পাশাপাশি রাত ১০টার বদলে দোকান খোলার সময়সীমা রাত ১১টা পর্যন্ত বাড়ানো হয়। এ ছাড়া নতুন করে শতাধিক মদের দোকানের লাইসেন্স প্রদান করা হয়, যা নিয়ে রাজ্য বিধানসভায় বিরোধী দলের প্রশ্নবাণে বিদ্ধ হতে হয়েছে শাসক শিবিরকে। তবুও মদ ব্যবসায়ীদের সীমাহীন লোভের কারণে রাত ১১টার পরও অবাধে মদের কারবার চলছে, বিশেষত শহরের বাইরের এলাকায়।
নেশার সহজলভ্যতার কারণে যুবসমাজ এবং শিক্ষিত প্রজন্ম বিপথগামী হচ্ছে। নেশামুক্ত ত্রিপুরার স্লোগান বাস্তবায়ন করতে গেলে কেবল স্লোগানে সীমাবদ্ধ না থেকে প্রশাসনিক কড়া নজরদারি এবং শাস্তিমূলক ব্যবস্থার প্রয়োজন।
সাধারণ মানুষ এবং সচেতন মহলের বক্তব্য, নেশামুক্ত ত্রিপুরা স্লোগানটি বর্তমানে শুধুই কথার কথা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অবৈধ মদের কারবার বন্ধ করতে হলে প্রশাসনিক শৈথিল্য দূর করে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। বিশেষ করে প্রজাতন্ত্র দিবসের মতো গুরুত্বপূর্ণ দিনে সরকারি নির্দেশ অমান্য করার ঘটনায় কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি উঠেছে।
নেশামুক্ত ত্রিপুরার স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক সদিচ্ছা, প্রশাসনিক তৎপরতা এবং সাধারণ মানুষের সচেতনতা। পেছনের দরজা দিয়ে মদ বিক্রির মতো ঘটনা বন্ধে সরকারের উচিত কঠোর নজরদারি এবং দোষীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা। অন্যথায়, নেশামুক্ত ত্রিপুরার স্লোগান শুধুই ফাঁকা বুলি হয়ে থাকবে।