
Oplus_131074
প্রতিনিধি অনুপম পাল,কৈলাসহর
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের জন্য বারূনি স্নান এক মহত্ পবিত্র আচার, যা আত্মশুদ্ধি ও মোক্ষ লাভের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়। প্রতি বছর চৈত্র মাসের কৃষ্ণা ত্রয়োদশী তিথিতে এই পুণ্যস্নান অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে শত শত পূণ্যার্থীর সমাগম ঘটে। এই ধারাবাহিকতায়, আগামী ২৭শে মার্চ (১৩ই চৈত্র, বৃহস্পতিবার) কৈলাসহরের শ্রীরামপুর ব্রিজ সংলগ্ন মনু নদীর ঘাটে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ২০তম মহা বারূনি স্নান। রাধা মুরলিধর আশ্রমের উদ্যোগে আয়োজিত এই মহোৎসব উপলক্ষে নেওয়া হয়েছে নানান ধর্মীয় কর্মসূচি।
স্কন্দ পুরাণ অনুযায়ী, বারূনি স্নান হলো গঙ্গাস্নানেরই প্রতিরূপ। এই তিথিতে নির্দিষ্ট নদীতে স্নান করলে বহু শত গঙ্গাস্নানের ফল লাভ হয় বলে বিশ্বাস। বিশেষত, যে নদী দক্ষিণ থেকে উত্তর দিকে প্রবাহিত হয় এবং যেখানে পূর্বমুখী হয়ে দাঁড়ালে জল ডান দিক থেকে বাম দিকে প্রবাহিত হয়, সেই স্থান বারূনি স্নানের জন্য উপযুক্ত বলে মনে করা হয়। এই শাস্ত্রসম্মত বৈশিষ্ট্য অনুসারে কৈলাসহরের মনু নদীর এই ঘাটকে বারূনি স্নানের জন্য আদর্শ স্থান হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
গত ১৯ বছর ধরে এই পবিত্র স্থানে মহা বারূনি স্নানের আয়োজন করা হচ্ছে। আগে এখানে কোনো স্থায়ী ঘাট ছিল না, কিন্তু পূণ্যার্থীদের আস্থার প্রতি সম্মান জানিয়ে স্থানীয় মন্ত্রী টিংকু রায়ের উদ্যোগে নদীর পাড়ে একটি পাকা ঘাট ও মন্দির নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। যদিও কাজ এখনও সম্পূর্ণ হয়নি, তবুও এই বছর উৎসবটি এই অর্ধনির্মিত ঘাটেই অনুষ্ঠিত হবে।
উৎসব পরিচালনা কমিটির সভাপতি শ্যামল রায়, বিশিষ্ট সমাজসেবী বিমল কর, অরুণ সাহা, রাধা মুরলিধর আশ্রমের সেবায়িত বিধান গোস্বামী, শ্রীরামপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান অমরী দাস সরকারসহ অন্যান্যরা এক সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে পুরো কর্মসূচির ঘোষণা করেন।
সকাল ৬:৩০ ঘটিকায় রাধা মুরলিধর আশ্রম থেকে শোভাযাত্রার মাধ্যমে শ্রীরামপুর মনু নদীর ঘাটে গোপাল বিগ্রহ আনয়ন। সকাল ৮:৩০ ঘটিকয় গোপাল পূজা সহ থাকছে নানান অনুষ্ঠান। এছাড়াও থাকছে পূর্বপুরুষদের আত্মার শান্তির জন্য বিশেষ ত্রিপিণ্ডি শ্রাদ্ধের ব্যবস্থা।
সাংবাদিক সম্মেলনে উৎসব কমিটির সদস্য তথা বিশিষ্ট সমাজসেবী বিমল কর জানান, এবারের ২০তম মহা বারূনি স্নান উপলক্ষে দিনভর নানা ধর্মীয় কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। তিনি রাজ্যবাসীকে এই পবিত্র অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।
বারূনি স্নান কেবলমাত্র একটি ধর্মীয় আচার নয়, এটি এক আধ্যাত্মিক যাত্রা। পবিত্র স্নানের মাধ্যমে আত্মশুদ্ধি লাভ করা যায় বলে বিশ্বাস করা হয়। শাস্ত্র মতে, এই দিনে স্নান, দান, পূজা ও ভজন কীর্তন করলে জীবনের পাপ মোচন হয় এবং ঈশ্বরকৃপা লাভ করা যায়। বারূনি স্নান মানুষের মধ্যে ধর্মীয় চেতনা ও শুদ্ধতার অনুভূতি জাগিয়ে তোলে, যা দৈনন্দিন জীবনের কলুষতা দূর করে মানসিক শান্তি প্রদান করে।
এই পবিত্র তিথিতে হাজার হাজার ভক্ত, তীর্থযাত্রী ও ধর্মপ্রাণ মানুষের সমাগমে শ্রীরামপুর ব্রিজ সংলগ্ন মনু নদীর ঘাট হয়ে উঠবে এক মহামিলনের ক্ষেত্র। শাস্ত্রীয় বিধান মেনে, হৃদয়ের ভক্তি ও শ্রদ্ধা নিয়ে বারূনি স্নানে অংশগ্রহণ করাই হবে প্রকৃত পূণ্যলাভের মাধ্যম।