
প্রতিনিধি অনুপম পাল
কৈলাসহর,ঊনকোটি ত্রিপুরা
উত্তর-পূর্ব ভারতের মধ্যে সবচেয়ে বড় ইন্টিগ্রেটেড অ্যাকোয়া পার্ক গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে কৈলাসহরের ১৭-মেয়াদি হাওড়ের পতিত জমিতে। প্রশাসনের পরিকল্পনা অনুযায়ী, এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে শুধু মৎস্য চাষেই নয়, পর্যটন ও স্থানীয় ব্যবসার ক্ষেত্রেও ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। তবে, বিধায়ক বিরজীৎ সিংহ এই প্রকল্পের সম্ভাবনার পাশাপাশি কৃষকদের স্বার্থ ও পরিবেশগত ভারসাম্য নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
ঊনকোটি জেলা আদালতের সরকারি আইনজীবী সন্দীপ দেবরায় বলেন, “কৈলাসহরের ইন্টিগ্রেটেড অ্যাকোয়া পার্ক প্রকল্প উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অন্যতম বৃহৎ উদ্যোগ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এটি বাস্তবায়িত হলে এলাকার অর্থনীতি, মৎস্যচাষ ও পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটবে।” এই প্রকল্পের মাধ্যমে স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে, যেমন— পার্কের মূল কার্যক্রম মৎস্য উৎপাদন হওয়ায় প্রশিক্ষিত ও অনভিজ্ঞ উভয় শ্রেণির মানুষের জন্য কাজের সুযোগ থাকবে।আকর্ষণীয় অ্যাকোয়া পার্ক তৈরি হলে পর্যটকরা আসবেন, ফলে হোটেল, রেস্তোরাঁ, দোকান ও পরিবহন খাতে নতুন কর্মসংস্থান হবে। আধুনিক জলজ প্রাণী সংরক্ষণ, গবেষণা ও ব্যবস্থাপনার জন্য দক্ষ প্রযুক্তিবিদ ও কর্মচারীদের প্রয়োজন হবে। পার্কের চারপাশে সংশ্লিষ্ট ব্যবসা যেমন—জলজ উদ্ভিদ চাষ, মাছ প্রক্রিয়াকরণ ও হস্তশিল্প শিল্প গড়ে উঠতে পারে, যা কৃষকদের জন্য বিকল্প আয়ের পথ খুলবে।
বৈঠকে বিধায়ক বিরজীৎ সিংহ বলেন, “এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে কৃষকদের স্বার্থ ও পরিবেশগত ভারসাম্য বজায় রেখেই। কোনো কৃষকের জমি জোর করে অধিগ্রহণ করা যাবে না।”
সরকার যে উন্নয়ন পরিকল্পনা নিচ্ছে, তা অবশ্যই এলাকার মানুষের কল্যাণে হতে হবে। তবে, প্রকল্পটি কৃষি ও পরিবেশের ওপর কী ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে, তা গভীরভাবে বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন। কৃষকদের স্বার্থ রক্ষা করা না হলে, তারা ভবিষ্যতে সমস্যায় পড়তে পারেন।
বৈঠকে উপস্থিত জেলা শাসক দিলীপ কুমার চাকমাও আশ্বাস দিয়েছেন যে, “প্রকল্প বাস্তবায়নের আগে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া হবে এবং কৃষকদের সঙ্গে আলোচনার পরই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
এই প্রকল্পকে ঘিরে কৃষকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে। কেউ কেউ বলেন, এতে তাদের জমির ব্যবহার পরিবর্তিত হবে, যা ভবিষ্যতে সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। অন্যদিকে, অনেক কৃষক এই প্রকল্পকে স্বাগত জানিয়েছেন, কারণ এটি স্থানীয় অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে সাহায্য করবে।
এখন প্রশাসন, রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও কৃষকদের মধ্যে আরও আলোচনার পরই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে, সবাই একমত যে, সঠিক পরিকল্পনা ও স্বচ্ছ নীতি মেনে কাজ করলে এই প্রকল্প কৈলাসহরের জন্য এক নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে।