
Oplus_0
প্রতিনিধি অনুপম পাল, কাঞ্চনপুর
“চাকরি চাই তো টাকা দিন, কিন্তু টাকা দিয়েও মিললো না চাকরি!”—এই বাক্যটিই যেন এখন কাঞ্চনপুর তথা জয়শ্রী এলাকার সাধারণ মানুষের হতাশার প্রতিচ্ছবি। বিগত এক বছর আগে চাকরি দেওয়ার নাম করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে আলোচনায় এসেছিলেন কাঞ্চনপুর স্বায়ত্ত্বশাসিত পরিষদের (এম.ডি.সি) সদস্য স্বপ্না দাস ও তাঁর স্বামী, শিক্ষক-ঠিকাদার নিরেশ দাস। অভিযোগের রেশ কাটতে না কাটতেই ফের উঠে এলো আরও একটি চাঞ্চল্যকর দুর্নীতির কাহিনী।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রায় দুই মাস পূর্বে কাঞ্চনপুর থেকে জয়শ্রী হয়ে জলাবাসা-ধর্মনগর বাইপাস সড়কের জয়শ্রী বাজার সংলগ্ন এলাকা থেকে উত্তর লালজুরি নবজয়পাড়া পর্যন্ত ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ রাস্তার সংস্কারের বরাত পান নিরেশ দাস। ২৪ লক্ষ টাকা বরাদ্দে পূর্ত দপ্তরের এই কাজটির দায়িত্ব পেলেও বাস্তবে এর কাজের গুণগতমান ছিল একেবারেই নিম্নমানের বলে অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
রাস্তার হাল দেখে অনেকেই বিস্মিত—সংস্কার হওয়ার মাত্র দুই মাসের মধ্যেই পুনরায় রাস্তার করুণ দশা। স্থানীয়দের মতে, যেন সংস্কার কাজ হয়নি কিছুই। কাজের নামে সরকারি টাকা আত্মসাৎ করে নিজের পকেট ভারি করেছেন নিরেশ দাস। তাঁর স্ত্রী স্বপ্না দাস একজন জনপ্রতিনিধি হওয়ায় সেই রাজনৈতিক দাপটকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে কাজের বরাত নিয়েছেন তিনি, আর সেই সুযোগেই হয়েছে লক্ষ লক্ষ টাকার অনিয়ম।
তাঁদের বিরুদ্ধে আরও একটি গুরুতর অভিযোগ—জয়শ্রীতে থেকে নির্বাচিত হয়ে কাঞ্চনপুরে বিলাসবহুল বাড়ি নির্মাণ করে বসবাস করছেন স্বপ্না দাস। অথচ জয়শ্রীতে তাঁর পুরনো বাড়িটি পড়ে রয়েছে পরিত্যক্ত অবস্থায়। কিন্তু সেখানেই সরকারি টাকায় তৈরি হচ্ছে একটি কমিউনিটি ওয়াটার ট্যাংক! এমন প্রহসন দেখে স্থানীয়রা হতবাক। তাঁরা বলেন, ‘‘আমরা জল পাচ্ছি না, অথচ যেই বাড়িতে কেউ থাকেন না, সেখানেই হচ্ছে সরকারি সুবিধার প্রকল্প!’’
এলাকাবাসীদের দাবি, এম.ডি.সি হওয়ার পর স্বপ্না দাস নিজের আত্মীয়-স্বজনকে প্রাধান্য দিয়ে সরকারি কাজের বরাত দিচ্ছেন। অভিজ্ঞ ঠিকাদারদের পরিবর্তে নিজের স্বামীকে দিয়ে বারবার কাজ করিয়ে যাচ্ছেন, যার পরিণতিতে রাস্তা-ঘাটের উন্নয়ন নয়, বরং জনগণের ক্ষোভ এবং বঞ্চনার পাহাড়ই শুধু বেড়ে চলেছে।
স্থানীয়রা বলেন, যখন অন্য ঠিকাদার নিম্নমানের কাজ করেন, তখন এম.ডি.সি স্বয়ং গিয়ে তা পরীক্ষা করেন। কিন্তু নিজের স্বামীর এই দুর্নীতির বেলায় তাঁর ভূমিকা রহস্যজনকভাবে নীরব।
সাহস করে মুখ খুলতে শুরু করেছেন জনসাধারণ, বিশেষ করে আসন্ন এডিসি নির্বাচনের প্রাক্কালে। তাঁরা বলেন, “আমরা আর চুপ করে থাকবো না। দুর্নীতির জবাব চাই এবং এই স্বজনপোষণ ও অনিয়মের বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমরা চাই স্বপ্না দাস যেন অবিলম্বে অপসারিত হন।”