
✍️ নিজস্ব প্রতিনিধি আগরতলা
ত্রিপুরার ঊনকোটি জেলার কৈলাসহর শহর মনু নদীর পাশবর্তী অঞ্চলে বাংলাদেশ কর্তৃক উঁচু বাঁধ নির্মাণের ফলে বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখে পড়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। ভারি বৃষ্টিপাতের সময় এই বাঁধ জল প্রবাহের ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে, যা কৈলাসহর শহরকে বন্যার কবলে ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ত্রিপুরা বিধানসভায় কংগ্রেস বিধায়ক বীরজিৎ সিনহা।
বুধবার ত্রিপুরা বিধানসভার শূন্যকালে কংগ্রেস বিধায়ক বীরজিৎ সিনহা বিষয়টি উত্থাপন করেন। তিনি বলেন, মনু নদীর দুই পাড়ে থাকা বাঁধগুলোর মধ্যে ভারতীয় অংশের বাঁধটি ৪০ বছর আগে নির্মাণ করা হয়েছিল এবং বর্তমানে এটি অত্যন্ত জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। অপরদিকে, বাংলাদেশের অংশে নতুন করে উঁচু বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে, যা ভারি বৃষ্টিপাত হলে জল প্রবাহের ভারসাম্য নষ্ট করে কৈলাসহরে ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে।
বীরজিৎ সিনহা আরও বলেন, পূর্ববর্তী কংগ্রেস সরকারের সময় রাঙ্গাউটি গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে কৈলাসহর শহর পর্যন্ত ৭ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণের জন্য জমি চিহ্নিত করা হয়েছিল। কিন্তু বর্তমান সরকার সেই বাঁধের রক্ষণাবেক্ষণে বা উন্নয়নে কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়নি। তিনি মুখ্যমন্ত্রীকে জরুরি হস্তক্ষেপের আহ্বান জানান।
ফটিকরায় কেন্দ্রের বিধায়ক তথা মন্ত্রী সুধাংশু দাস কংগ্রেস বিধায়কের বক্তব্যের সাথে একমত পোষণ করেছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশে উঁচু বাঁধ নির্মাণের কারণে কৈলাসহরে ভয়াবহ বন্যার আশঙ্কা অমূলক নয়। তিনি মুখ্যমন্ত্রীকে অনুরোধ করেন, বিষয়টি সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
সুধাংশু দাস আরও বলেন, ইন্দো-বাংলাদেশ সীমান্তের উন্মুক্ততা আরেকটি বড় সমস্যা। সীমান্ত দিয়ে গবাদি পশু পাচার, চোরাচালান এবং বাংলাদেশিদের অবৈধ অনুপ্রবেশ বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি এই সমস্যাগুলো সমাধানে মুখ্যমন্ত্রীর সক্রিয় ভূমিকার দাবি জানান।
বিষয়টি নিয়ে বিধানসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, মনু নদীর ওপারে বাঁধ নির্মাণ নিয়ে উদ্বেগ যথার্থ। ত্রিপুরা সরকার ইতিমধ্যেই রাজ্যের অভ্যন্তরে প্রবাহিত ১২টি নদী ও জল সম্পদের সমস্যা পর্যালোচনা করেছে। কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে বিষয়টি সমাধানে ছবি ও প্রতিবেদনসহ একটি বিশদ নথি পাঠানো হয়েছে। তিনি নিশ্চিত করেন, এটি একটি আন্তর্জাতিক বিষয় এবং সরকার এই সমস্যার স্থায়ী সমাধানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
বিধানসভা অধিবেশন শেষে কংগ্রেস বিধায়ক বীরজিৎ সিনহা সাংবাদিকদের জানান, বিএসএফ মনু নদীর ওপারে বাঁধ নির্মাণ না করার জন্য বর্ডার গার্ড অব বাংলাদেশের (বিজিবি) কাছে আপত্তি জানিয়েছিল, কিন্তু তাতে কোনো প্রতিক্রিয়া আসেনি। তিনি যোগ করেন, বর্তমানে বাংলাদেশে অস্থির পরিস্থিতি এবং অনুপ্রবেশ বাড়ার কারণে সীমান্তবর্তী এলাকায় আরও নিরাপত্তা বাড়ানো প্রয়োজন।
কৈলাসহর ও আশপাশের এলাকায় মনু নদীর কারণে বন্যার সম্ভাব্য বিপদ এড়াতে ত্রিপুরা সরকারের সক্রিয় পদক্ষেপ জরুরি। একইসাথে সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার এবং ভারতীয় বাঁধের রক্ষণাবেক্ষণ নিশ্চিত করা প্রয়োজন বলে স্থানীয় বাসিন্দারা ও বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।