✍️ প্রতিনিধি অনুপম পাল
এক সময় ছিল, যখন গ্রামে-গঞ্জে কিংবা শহরের প্রান্তে খোলা আকাশে ঘুড়ি ওড়ানোর দৃশ্য ছিল নিত্যদিনের এক আনন্দময় অংশ। শিশু-কিশোরদের জন্য ঘুড়ি ওড়ানো শুধু বিনোদনই ছিল না, বরং এটি ছিল সৃজনশীলতার এক মাধ্যম। নিজেদের হাতে কাগজ, বাঁশের কাঠি, আঠা দিয়ে ঘুড়ি বানানোর যে মেধা আর মনোযোগ দরকার, তা শিশুদের মধ্যে শিল্পের প্রতি এক আগ্রহ জাগিয়ে তুলত। সেই ছোট্ট ছোট্ট হাতগুলো ঘুড়ি বানানোর জন্য রঙিন কাগজ বেছে নিত, নিজেরা দড়ি পাকাত, আবার সেগুলো নিয়ে দৌড়াত খোলা ধানের মাঠে।
ঘুড়ি উড়ানোর সময় নিজেদের মধ্যে যে প্রতিযোগিতা ছিল, তা বর্ণনাতীত। একে অপরের ঘুড়ি কাটার জন্য কৌশল বের করা, জোরে সুতার টান দেয়া, আবার কেটে যাওয়া ঘুড়ি ধরার জন্য দৌড়ানো—এসব ছিল আনন্দঘন এক অভিজ্ঞতা। কখনো কখনো গাছের ডালে আটকে যাওয়া ঘুড়ি নামানোর জন্য ঝুঁকিও নিতে হতো, যা ছিল একরকম রোমাঞ্চ।
কিন্তু সময়ের সাথে সাথে ঘুড়ি ওড়ানোর এই ঐতিহ্য যেন বিলুপ্তির পথে। আধুনিক প্রযুক্তি, মোবাইল ফোন আর ভার্চুয়াল গেমের প্রতি নতুন প্রজন্মের আসক্তি ধীরে ধীরে তাদের মাঠের আনন্দ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিচ্ছে। ঘুড়ি ওড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় খোলা আকাশ, প্রান্তর কিংবা সামাজিক পরিবেশও অনেক ক্ষেত্রে হারিয়ে যাচ্ছে।
এই হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যটি ফিরিয়ে আনতে হলে আমাদের উদ্যোগী হতে হবে। স্কুল-কলেজে ঘুড়ি উৎসব আয়োজন করা, পাড়া-মহল্লায় ঘুড়ি ওড়ানোর প্রতিযোগিতা করা এবং শিশুদের এ সম্পর্কে আগ্রহী করে তোলা খুবই জরুরি। শুধু ঐতিহ্য সংরক্ষণই নয়, ঘুড়ি ওড়ানোর মতো সাধারণ একটি বিনোদন শিশু-কিশোরদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
ফেলে আসা সেই দিনগুলোর স্মৃতিচারণ আমাদের মনে করিয়ে দেয়, আনন্দ কখনো ব্যয়বহুল হতে হয় না। একটি সাধারণ ঘুড়ি আমাদের জীবনে কতখানি আনন্দ বয়ে আনতে পারে, তা বুঝতে হলে হয়তো আমাদের সেই দিনগুলোতে ফিরে যেতে হবে। নতুন প্রজন্মকেও সেই আনন্দের অংশীদার করতে হবে।
আকাশে রঙিন ঘুড়ি উড়ানোর মধ্য দিয়ে হারিয়ে যাওয়া সেই দিনগুলোকে আবার ফিরিয়ে আনা সম্ভব। ঘুড়ি শুধু কাগজ আর সুতার একখণ্ড জিনিস নয়, এটি শৈশবের এক টুকরো সুখস্মৃতি, যা নতুন প্রজন্মের হাত ধরে বেঁচে থাকতে পারে চিরকাল।