কৈলাসহর,প্রতিনিধি চারুকৃষ্ণ কর ও অনুপম পাল,কালের গর্ভে একসময় কৈলাসহরের গর্ব রাধা কিশোর ইনস্টিটিউশন (আরকেআই) এখন তার হারানো গৌরব ফিরে পাওয়ার চেষ্টায় দিন গুনছে। একসময় রাজ্যস্তরে এই স্কুল ছিল শ্রেষ্ঠ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অন্যতম। কিন্তু ২০১১ সালের পর থেকে মেধা তালিকায় কোনো ছাত্র-ছাত্রী রাজ্যস্তরে সাফল্য অর্জন করতে পারেনি। শিক্ষার মানের এই অবনমন নিয়ে শহরে জোর বিতর্ক শুরু হয়েছে।
রাধা কিশোর ইনস্টিটিউশনের মান কমে যাওয়ার পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে,১)মাধ্যমিক পরীক্ষায় ভালো ফল করা বেশিরভাগ ছাত্রছাত্রী নেতাজি বিদ্যাপীঠে স্থানান্তরিত হয়ে যাচ্ছে। এতে স্কুলে মেধাবী শিক্ষার্থীর অভাব দেখা দিয়েছে ২) তিনটি বিভাগ (কলা, বিজ্ঞান ও বাণিজ্য) চালু থাকা সত্ত্বেও শিক্ষক স্বল্পতা চরম আকার ধারণ করেছে। বিশেষত সংস্কৃত এবং বায়োসায়েন্স বিষয়ের কোনো শিক্ষকই নেই ৩) অতীতে নির্বাচনের জন্য স্কুলকে ব্যবহার করা হতো, ফলে প্রায় তিন মাস পঠন-পাঠন বন্ধ থাকত। যদিও এবার পঞ্চায়েত নির্বাচনে স্কুল ব্যবহার করা হয়নি ৪) শিক্ষা দপ্তর শিক্ষক নিয়োগ এবং শিক্ষার মান উন্নয়নে আগ্রহ দেখাচ্ছে না, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।
বর্তমানে রাধা কিশোর ইনস্টিটিউশনে ৬৪৬ জন ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা করছে। বছর চারেক আগে এই স্কুলে ছাত্রীদের পড়ার সুযোগ চালু হয়েছে। স্কুলটি বর্তমানে ইংরেজি মাধ্যম হিসেবে সিবিএসই কোর্সে পরিচালিত হচ্ছে। তবে শিক্ষক স্বল্পতা এবং শিক্ষার মান উন্নয়নে সরকারি উদ্যোগের অভাবে ফলাফল আশানুরূপ হচ্ছে না। গেল বছর মাধ্যমিকে মাত্র ৬ জন প্রথম বিভাগে এবং উচ্চ মাধ্যমিকে ২৪ জন প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়েছে, যা অত্যন্ত হতাশাজনক।
সদ্য প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগ দেওয়া নীতিশ বিশ্বাসের ওপর স্কুলের পুরনো গৌরব ফেরানোর দায়িত্ব এসে পড়েছে। অতীতে তিনি যেসব স্কুলে কাজ করেছেন, সেগুলোতে রাজ্যস্তরে সাফল্য এনে দিয়েছেন। এমনকি তাঁর কাজের জন্য রাজ্যস্তরে পুরস্কারও পেয়েছেন। কৈলাসহরবাসী আশা করছে, তাঁর অক্লান্ত পরিশ্রম এবং উদ্যোগে রাধা কিশোর ইনস্টিটিউশন আবার সাফল্যের শিখরে পৌঁছাবে।
স্থানীয় মানুষজন এবং বিশ্লেষকদের মতে, শিক্ষা দপ্তর যদি শিক্ষক নিয়োগ এবং স্কুলে শিক্ষার মান উন্নয়নে যথাযথ উদ্যোগ নেয়, তবে রাধা কিশোর ইনস্টিটিউশন তার পুরনো ঐতিহ্য ফিরে পেতে পারে। নির্বাচনের জন্য স্কুল ব্যবহার না করে আলাদা হল নির্মাণের প্রস্তাবকেও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
এই উদ্যোগগুলো বাস্তবায়িত হলে রাধা কিশোর ইনস্টিটিউশন একদিন পুনরায় রাজ্যস্তরে মেধার শীর্ষে জায়গা করে নেবে, এমনটাই বিশ্বাস কৈলাসহরবাসীর।