
Oplus_2
প্রতিনিধি অনুপম পাল। কৈলাসহর
ত্রিপুরার চা বাগান এলাকায় কর্মরত হাজার হাজার শ্রমিকের দীর্ঘদিনের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে মজুরি বৃদ্ধির ঘোষণা করেছে রাজ্য সরকার। শ্রম দপ্তরের পক্ষ থেকে ১০৫ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে দৈনিক মজুরি ২০৪ টাকা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এই ঐতিহাসিক পদক্ষেপে শ্রমিক মহলে আনন্দের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। এই উপলক্ষে আজ চন্ডিপুর মণ্ডলের টি গার্ডেন সেল রাজ্যের শ্রম মন্ত্রী টিঙ্কু রায়কে শ্রীরামপুর স্বামী বিবেকানন্দ হলে এক বিশেষ অনুষ্ঠানে সম্মাননা জ্ঞাপন করে।
অনুষ্ঠানের সূচনালগ্নে বাগান শ্রমিকদের ঐতিহ্যবাহী ‘ছুপি’ পরিয়ে মন্ত্রীকে সম্মান প্রদর্শন করা হয়। এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মূর্তিছড়া চা বাগানের প্রধান এবং ত্রিপুরা টি গার্ডেন সেলের কনভেনার চন্দ্রশেখর কূর্মী, চন্ডিপুর মণ্ডলের সহ সভাপতি মনোজ কৈরি, মণ্ডল সভাপতি পিন্টু ঘোষ, এবং মণ্ডলের টি সেল কনভেনার দীপক মুন্ডা।
স্বাগত বক্তব্যে মনোজ কৈরি বলেন, বর্তমান সরকার শ্রমিকদের প্রতি দায়বদ্ধ। হাজিরা বৃদ্ধি সহ একাধিক সরকারি উদ্যোগে বাগান এলাকার জনজাতি ও শ্রমজীবী মানুষেরা উপকৃত হচ্ছেন। পিন্টু ঘোষ সিপিএম সরকারকে কটাক্ষ করে বলেন, “তাদের শাসনে ছিল মিছিল, আজকের সরকার আন্দোলন ছাড়াই শ্রমিকদের অধিকার তাদের হাতে তুলে দিচ্ছে।”
স্টেট টি সেল কনভেনার চন্দ্রশেখর কূর্মী বলেন, “এই সরকার শ্রমিকদের প্রকৃত সম্মান দিয়েছে। এক সময় বোনাস ও মজুরি নির্ধারিত হতো নেতাদের সিদ্ধান্তে, এখন সরকার মালিক পক্ষকে চাপ দিয়ে শ্রমিক স্বার্থ রক্ষা করছে।”
শ্রদ্ধাসম্পন্ন বক্তব্য রাখেন শ্রম মন্ত্রী টিঙ্কু রায়। তিনি জানান, শতবর্ষ পুরোনো চা বাগানগুলোতে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে শ্রমিকরা বসবাস করছেন। তিনি বলেন, “২০১৫ সালে যখন মজুরি ছিল মাত্র ৮৩ টাকা, তখনও এই মানুষগুলোর জন্য কেউ ভাবেনি। কিন্তু বিজেপি সরকারের সাত বছরের শাসনে মজুরি ১০৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০৪ টাকা করা হয়েছে।”
মন্ত্রী জানান, এখন পর্যন্ত ৩১৬৬ জন বাগিচা শ্রমিককে জমির পাট্টা দেওয়া হয়েছে, অনেককে পাকা ঘরও দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও ৪৯২২টি পরিবারকে প্রায়োরিটি রেশন কার্ডও প্রদান করা হয়েছে। মনুভ্যালি বাগানে শ্রমিক মৃত্যুর ঘটনায় ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৯ লক্ষ ৭ হাজার ৮৭৫ টাকা পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
শ্রমিক কল্যাণে সরকারের পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে তিনি জানান, নির্মাণ শ্রমিকদের ক্ষেত্রেও একাধিক উন্নয়নমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। যেমন, বিবাহ ভাতা ১০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে ৫০ হাজার, মৃত্যুকালীন ক্ষতিপূরণ ২০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ২ লক্ষ, দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুর ক্ষতিপূরণ ৪০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৪ লক্ষ টাকা করা হয়েছে।
২০২৪ সালের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ১৬,৫৫৫ জন শ্রমিককে দেওয়া হয়েছে মোট ১৯ কোটি টাকা অনুদান। উল্লেখযোগ্যভাবে তিনি জানান, বন্ধ হয়ে যাওয়া তাচাই চা বাগান পুনরায় চালু করে ১০ লক্ষ টাকার অনুদানও প্রদান করা হয়েছে।
বক্তব্য রাখতে গিয়ে মন্ত্রী বলেন,কৈলাসহর প্রেস ক্লাবের দুই সাংবাদিক অনুপম পাল ও দেবাশীষ দত্ত বেশ কিছুদিন পূর্বে দুটি সংবাদ পরিবেশন করেন তার মধ্যে অভাবের তাড়নায় কলাছড়া এলাকার এক যুবক লক্ষণ উড়াং পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারছেননা বলে সংবাদ পরিবেশনের পর আমি নিজে তার বাড়িতে যাই এবং তার পড়াশোনার জন্য মাসিক ভাতার ব্যবস্থা সহ নানান সাহায্য তুলে দেওয়া হয়। এছাড়াও কালিশাসন চাবাগানের একটি ছেলে গাছ থেকে পড়ে গিয়ে পায়ে ক্ষত হয়। আর্থিক ভাবে দুর্বল হওয়ায় সে চিকিৎসা করাতে পারছিলোনা সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয় আগরতলা জিবি হাসপাতালে এবং সমস্ত আর্থিক সহায়তা করা হয় তাকে। বর্তমানে সে সম্পূর্ণ সুস্থ। সংবাদ মাধ্যমে যখনই বাগানের কোনো মানুষের দুর্দশার কথা চোখে পড়েছে তখনই পাশে থেকে তাদের সাহায্য করছে আমাদের সরকার।
আজকের এই মঞ্চ থেকে তিনি আরও ঘোষণা করেন, আগস্ট মাসে শহীদ বিষ্ণুপ্রসাদ গোয়ালার নামে একটি ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজন করা হবে, যেখানে চা বাগান এলাকার খেলোয়াড়দের উৎসাহিত করার পাশাপাশি শহীদ পরিবারকেও সম্মান জানানো হবে।
অনুষ্ঠান চলাকালীন শ্রীরামপুরের স্বামী বিবেকানন্দ প্রেক্ষাগৃহ ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। শ্রমিকদের উপস্থিতি ও উচ্ছ্বাস প্রমাণ করে, বর্তমান সরকার তাদের পাশে রয়েছে। আজকের এই সম্মাননা শুধু একজন মন্ত্রীর প্রতি নয়, বরং একজন নেতৃত্বদানকারী প্রশাসকের প্রতি শ্রমজীবী মানুষের কৃতজ্ঞতার প্রতিফলন।