
Oplus_0
প্রতিনিধি অনুপম পাল, ধর্মনগর
ত্রিপুরার স্বাস্থ্যব্যবস্থার করুণ চিত্রে আবারও কালিমালিপ্ত হল মানবিকতা। রোগী ইমারজেন্সিতে কাতরাচ্ছেন, আর দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক বন্ধুদের সঙ্গে সরকারি কোয়ার্টারে বসে ‘আড্ডা’ মারছেন! শুধু তাই নয়, কোয়ার্টারেই প্রেসক্রিপশন লিখে রোগীর হাতে ধরিয়ে চাওয়া হচ্ছে ৫০০ টাকার ‘ভিজিট’—সরকারি হাসপাতালে! এমন লজ্জাজনক, নিন্দনীয় ঘটনা ঘটেছে উত্তর জেলার ধর্মনগর মহকুমাধীন শনিছড়া প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে।
স্থানীয় বাসিন্দা গোপাল দাস জানান, গুরুতর অসুস্থ স্ত্রী বিচিত্রা মালাকারকে শুক্রবার বিকেলে তিনি শনিছড়া হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু ইমারজেন্সি চেম্বারে কোনও চিকিৎসক ছিলেন না। এক নার্স তাঁকে জানান, চিকিৎসক বিশ্বনাথ চাকমা তাঁর কোয়ার্টারে রয়েছেন। বাধ্য হয়ে তিনি স্ত্রীকে নিয়ে কোয়ার্টারে গেলে দেখেন, চিকিৎসক বন্ধুর সঙ্গে বসে গল্পে মশগুল।
রোগীর জরুরি অবস্থার কথা বলেও লাভ হয়নি। দাঁড়িয়ে থাকতে হয় প্রায় ১৫ মিনিট। পরে এক রকম অনিচ্ছা ভঙ্গিতে একটি প্রেসক্রিপশন লেখেন ডাক্তার সাহেব, বিনা পরীক্ষা-নিরীক্ষায়। এরপর সোজাসুজি দাবি করেন ৫০০ টাকা ভিজিট! সরকারি হাসপাতালে ভিজিট কেন দেবেন—এই প্রশ্ন করতেই চিকিৎসক প্রেসক্রিপশন ছিনিয়ে নেন, শুরু হয় বাক-বিতণ্ডা। গোপাল দাস বলেন, তিনি ঘটনার ভিডিও তুলতে গেলে চিকিৎসক ফোন কাড়ার চেষ্টা করেন এবং স্থানীয় লোকজন ডেকে তাঁকে আটকে রাখার ভয় দেখান।
গোপাল দাস জানান, কয়েক মাস আগেও একই চিকিৎসকের কাছেই কোয়ার্টারে গিয়ে চিকিৎসা নিতে হয়েছিল। তখন ইনজেকশন দেওয়ার পর থেকেই তাঁর স্ত্রী কোমরের যন্ত্রণায় ভুগছেন। তাঁর অভিযোগ—এই হাসপাতালে কোনও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ নেই। গর্ভবতী নারীদের প্রসব করানো হচ্ছে স্টাফ নার্স ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মীদের দিয়ে! এতে একাধিক নবজাতকের মৃত্যু ঘটেছে বলেও স্থানীয়দের অভিযোগ।
গোপাল দাসের শাশুড়ি বাসন্তী মালাকারও ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, “মেয়েকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে ইমারজেন্সিতে কেউ ছিল না। কোয়ার্টারে গেলে চিকিৎসক প্রথমে দাঁড় করিয়ে রাখেন, তারপর কোনও পরীক্ষা না করেই ৫০০ টাকা দাবি করেন!”
এই চিত্রই কি উন্নয়ন? এই কি ‘স্বাস্থ্যোন্নয়নের’ ঢাক-ঢোল? রোগী যখন হাসপাতালের বিছানায় নয়, দাঁড়িয়ে চিকিৎসার জন্য ভিক্ষা চায় আর ডাক্তার তখন বন্ধুদের সঙ্গে ‘মজায়’—তখন এটাই হয়ে ওঠে ত্রিপুরার স্বাস্থ্য ব্যবস্থার নির্মম প্রতিচ্ছবি।
সরকার মুখে স্বাস্থ্যখাতে বিপুল বিনিয়োগের কথা বললেও, মাঠে নেমে বাস্তব চিত্র দেখলে গা শিউরে ওঠে। এই ঘটনা প্রমাণ করে, রাজ্যের প্রান্তিক মানুষ এখন স্বাস্থ্যসেবার নামে পাচ্ছেন কেবল বঞ্চনা, অপমান এবং ভয়ানক অনিশ্চয়তা।
স্থানীয়রা অবিলম্বে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ ও শনিছড়া হাসপাতালের সার্বিক সংস্কারের দাবি তুলেছেন। মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ ছাড়া এই স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় ন্যূনতম পরিবর্তন সম্ভব নয়—এটা এখন জনমতের চরম দাবি।