
আগরতলা প্রতিনিধি
ককবরক ভাষাকে রোমান হরফে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবিতে তিপ্রা মথার ছাত্র সংগঠন TISF ত্রিপুরাজুড়ে ব্যাপক সড়ক অবরোধ ও আন্দোলন গড়ে তোলে। শুক্রবার সকাল থেকেই রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় ছাত্র সংগঠনের কর্মী-সমর্থকরা রাস্তায় নেমে পিকেটিং করে এবং টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখায়। আগরতলার সার্কিট হাউস চত্বর, গন্ডাছড়া, রইস্যাবাড়ি, জম্পুইজলা, লংতরাইভ্যালি, বিশ্রামগঞ্জ, গোলাঘাটি, চম্পকনগর, সাব্রুম-জোলাইবাড়ি সহ বিভিন্ন এলাকায় অবরোধের কারণে যান চলাচল একেবারে বন্ধ হয়ে যায়।
তিপ্রা মথার প্রাক্তন সুপ্রিমো ও MDC প্রদ্যোত কিশোর দেববর্মন আন্দোলনকারীদের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের দাবিকে পূর্ণ সমর্থন জানান। তিনি বলেন, “তিপ্রাসাদের ভাষা ও সংস্কৃতির দাবির ক্ষেত্রে কোনো আপস হবে না। শিক্ষার্থীরা তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছে, অথচ সরকার এ বিষয়ে কার্যকর কোনো সিদ্ধান্ত নিচ্ছে না।” তিনি আরও বলেন, পূর্বতন বামফ্রন্ট সরকার, কংগ্রেস ও বর্তমান বিজেপি সরকার— কেউই এই ন্যায্য দাবিকে গুরুত্ব দেয়নি।
TISF-এর ডাকে রাজ্যের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে অবরোধের ফলে জাতীয় সড়কে যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। আসাম-আগরতলা জাতীয় সড়ক, আগরতলা-সোনামুড়া সড়ক, জম্পুইজলা-জিরানিয়া সড়ক, আগরতলা-বক্সনগর সড়ক, বিশ্রামগঞ্জ-উদয়পুর সড়ক সহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সড়কে অবরোধের কারণে যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
এছাড়া, ত্রিপুরা মধ্যশিক্ষা পর্ষদ পরিচালিত ককবরক বিষয়ের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা বন্ধ হয়ে যায়। পরীক্ষার্থীরা কেন্দ্রের উদ্দেশ্যে রওনা দিলেও অবরোধের কারণে তারা যথাসময়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছাতে পারেনি। ICSE বোর্ডের পরীক্ষার্থীরাও ভোগান্তির শিকার হন।
সড়ক অবরোধের ফলে রাজ্যের মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরীকে পথ পরিবর্তন করে বিধানসভায় যেতে হয়। আন্দোলনকারীরা ভিআইপি রোড অবরোধ করলে মন্ত্রীর কনভয় অন্য পথে যেতে বাধ্য হয়।
অন্যদিকে, কংগ্রেস বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মন আন্দোলনকারীদের পাশে দাঁড়িয়ে বলেন, “ককবরক ভাষার রোমান হরফের দাবিতে আমরা বরাবরই সমর্থন দিয়ে আসছি। সরকার জনজাতিদের আবেগ নিয়ে খেলা করছে।” তিনি বলেন, “১৯৬৮ সাল থেকে এই দাবিতে আন্দোলন চলছে, অথচ আজও কোনো স্থায়ী সমাধান হয়নি।”
গতকাল রাতে মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা ও প্রদ্যোত কিশোর দেববর্মনের মধ্যে এক রুদ্ধদ্বার বৈঠক হয়, তবে সেই বৈঠকে কোনো সমাধান হয়নি। এরপরেই শুক্রবার সকাল থেকে রাজ্যজুড়ে TISF-এর নেতৃত্বে তীব্র আন্দোলন শুরু হয়।
রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় অবরোধের ফলে হাজার হাজার মানুষ আটকে পড়েন। সাধারণ মানুষ, অফিসগামী কর্মী, পরীক্ষার্থীরা চরম ভোগান্তির শিকার হন। এডিসি এলাকাগুলোর রেললাইনেও আন্দোলনকারীরা পিকেটিং করেন, ফলে ট্রেন চলাচলও ব্যাহত হয়।
TISF-এর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, “যতদিন না সরকার ককবরক ভাষার রোমান হরফের স্বীকৃতি দেয়, ততদিন এই আন্দোলন চলবে।” তারা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, “সরকার যদি দ্রুত কোনো সিদ্ধান্ত না নেয়, তাহলে ভবিষ্যতে আরও কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।”