
oplus_0
প্রতিনিধি অনুপম পাল,কৈলাসহর
সরকারি টেন্ডারের নামে নাটক, রাজনৈতিক দাদাগিরির মঞ্চ, আর সেই মঞ্চের আলোকসজ্জা হিসেবে জ্বলন্ত একটি মোটরসাইকেল! উন্নয়নের নামে শহরে যে ‘বিরাট উন্নতি’ হয়েছে, তার প্রমাণ মিলল কৈলাসহরের জল সম্পদ বিকাশ দপ্তরের সামনে। ৩ কোটি ৪০ লক্ষ টাকার ঠিকাদারি কাজের বরাত, আর নগদ ২০ লক্ষ টাকা ঘুষের দাবিকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের বিবাদ চরমে উঠল। শাসক দল বনাম বিরোধী, ঠিকাদার বনাম ঠিকাদার— এই দ্বন্দ্বে পুড়ল বাইক, জমল উত্তেজনা, তবু থামল না দুর্নীতি আর রাজনৈতিক দাদাগিরি।
সরকারি নিয়ম অনুযায়ী গত ২০শে ফেব্রুয়ারি ২০২৫ সালে অনলাইন টেন্ডারের মাধ্যমে ডি এন কনস্ট্রাকশন সংস্থা জলাই এলাকার কাজের বরাত পায়। কিন্তু বরাত পাওয়াটাই শেষ কথা নয়, বরং আসল খেলা শুরু হয় এরপর! অভিযোগ উঠেছে, বর্তমান শাসক দলের একাংশ ঠিকাদারদের স্পষ্ট জানিয়ে দেয়— “কাজ করতে হলে ২০ লক্ষ টাকা চাঁদা দিতে হবে, নয়তো কাজের কথা ভুলে যান!”
কিন্তু ডি এন কনস্ট্রাকশন সাহস করে নিয়ম মেনে ওয়ার্ক অর্ডার নিয়ে নেয়। আর এতেই চটে যায় শাসক দলের ঠিকাদাররা। ডি এন কনস্ট্রাকশনের ঠিকাদারদের অভিযোগ কাজ যাতে শুরু না হয়, সেই জন্য জল সম্পদ বিকাশ দপ্তরের অফিস চত্বরে পাহারায় বসেন শাসক দলীয় ঠিকাদাররা। কিন্তু সমস্যা একটাই— এত বিশাল নাটকে দর্শক নেই, তাই গল্প জমাতে একটা বাইক জ্বালানো দরকার ছিল!
শাসক দলীয় ঠিকাদারদের দাবি— “বিরোধীরা বাইক জ্বালিয়ে অশান্তি ছড়িয়েছে।”
আর বিরোধীরা বলছে— “বিজেপির লোকেরাই নিজেদের বাইক জ্বালিয়ে পরিস্থিতি গরম করেছে।”
বিরোধীরা আরও এক ধাপ এগিয়ে জানিয়ে দিয়েছে, সিসিটিভি ফুটেজ তাদের কাছে আছে, যা প্রমাণ করবে কারা সত্যিকারের ‘অগ্নিকাণ্ডের মহানায়ক’! এদিকে, শাসক দলের অনুগত ঠিকাদাররা বলছে, “কংগ্রেস বিধায়ক বিরজীৎ সিনহার লোকেরাই বাইকে আগুন দিয়ে শহরে অশান্তি ছড়াচ্ছে, কারণ তাদের উন্নয়ন সহ্য হচ্ছে না!”
শ্রীরামপুরের এক ঠিকাদার মতলব বাবু তো সরাসরি বলে দিলেন, “বিরজীৎ সিনহা দীর্ঘ বছর বিধায়ক থেকেও কিছু করেননি, এখন উন্নয়ন হজম করতে পারছেন না!” অপরদিকে, বিরোধীদের দাবি, “বিজেপির লোকেরা উন্নয়নের নামে কাটমানির বাজার খুলেছে, তাই টাকা না পেয়ে এখন বিশৃঙ্খলা তৈরি করছে!”
বাইকে আগুন দেওয়ার পরই প্রশাসন নড়েচড়ে বসে। মহকুমা পুলিশ আধিকারিক জয়ন্ত কর্মকার, কৈলাসহর থানার ওসি সুকান্ত সেন চৌধুরীসহ এক ঝাঁক পুলিশ, টি এস আর বাহিনী ঘটনাস্থলে নামে। কিন্তু দুই পক্ষই নিজেদের অবস্থানে অনড়! বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত পুলিশ উপস্থিত থাকলেও, উত্তেজনা তেমন একটা কমেনি।
এদিকে সাধারণ মানুষ আতঙ্কে! কাজের নামে দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, বাইক পোড়ানো, রাজনৈতিক লড়াই— এই সব কিছুর মাঝে কে আসল ঠিকাদার, কে সরকারি কর্মচারী, আর কে দুষ্কৃতী, তা বোঝার উপায় নেই।
সরকার বদলায়, শাসক বদলায়, কিন্তু ‘টেন্ডারবাজি’ বদলায় না! সরকারি উন্নয়ন মানে এখন শুধু ঠিকাদারি সিন্ডিকেট, চাঁদাবাজি আর রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের খেলা। শাসক দল হোক বা বিরোধী, কাজের বরাত মানেই ‘কে কত টাকা পাবে’ তার ভাগবাটোয়ারা!
এখনো কৈলাসহরের পরিস্থিত থমথমে। ঘটনাস্থল থেকে পুড়ে যাওয়া বাইকটি কৈলাসহর থানায় নিয়ে গেছে পুলিশ। প্রশাসন কি শক্ত পদক্ষেপ নেবে, নাকি কয়েকদিন পর আরও বড় কোনো নাটক মঞ্চস্থ হবে? আপাতত মহকুমাবাসীর সব দৃষ্টি প্রশাসনের দিকে!