
প্রতিনিধি অনুপম পাল,আগরতলা
ত্রিপুরা রাজ্যের অর্থমন্ত্রী প্রণজিৎ সিংহ রায় ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষের জন্য ৩২,৪২৩.৪৪ কোটি টাকার বাজেট বিধানসভায় পেশ করেছেন, যেখানে ৪২৯.৫৬ কোটি টাকার ঘাটতি ধরা হয়েছে। অর্থমন্ত্রীর মতে, এই বাজেট অর্থনীতির গতি বাড়াতে, অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে এবং নারীর ক্ষমতায়নকে অগ্রাধিকার দিতে বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা বাজেটকে “সামগ্রিক উন্নয়নের লক্ষ্যে সর্বাঙ্গীণ বাজেট” হিসেবে অভিহিত করেছেন এবং বলেছেন, “এই বাজেট প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ, সবকা বিশ্বাস’ নীতির প্রতিফলন ঘটিয়েছে।”
২০২৫-২৬ বাজেটে রাজ্যের নিজস্ব কর রাজস্ব ৪০১০ কোটি টাকা এবং কর-বহির্ভূত রাজস্ব ৫০৪ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত বছরের তুলনায় বাজেটের পরিমাণ ৪৬১৮.৭৭ কোটি টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে, যা অর্থনীতির বৃদ্ধির ইতিবাচক লক্ষণ।
বিগত বছরগুলোর তুলনায় এবারের বাজেটে মূলধন ব্যয় (৭,৯০৩ কোটি টাকা) ১৯.১৪% বৃদ্ধি পেয়েছে, যা অবকাঠামোগত উন্নয়নের প্রতি সরকারের অঙ্গীকারকে তুলে ধরে। উল্লেখযোগ্যভাবে, ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষের বাজেট ২৭,৮০৪.৬৭ কোটি টাকা থেকে সংশোধিত বাজেটে ৩০,২৯৬.৫০ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছিল, যা চলতি বছর আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।
অর্থমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন যে এবারের বাজেটে কোনো নতুন কর প্রস্তাব করা হয়নি, বরং অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার জন্য নতুন প্রকল্পগুলোর উপর জোর দেওয়া হয়েছে। বাজেটে বেশ কয়েকটি নতুন স্কিম চালু করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে,যেমন ভারত মাতা ক্যান্টিন –যেখানে সাধারণ মানুষের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যে খাবার সরবরাহ করা হবে।
প্রতিবন্ধীদের জন্য এন্টারটেইনমেন্ট সেন্টার – বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য বিনোদনের সুযোগ বাড়ানো হবে।মুখ্যমন্ত্রী কন্যা বিবাহ যোজনা – বিয়ের জন্য আর্থিক সহায়তা প্রদান করে নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা। মুখ্যমন্ত্রী বালিকা সমৃদ্ধি যোজনা – কন্যাশিশুর শিক্ষা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে নতুন পদক্ষেপ। কম্পিউটার-ভিত্তিক পরীক্ষা কেন্দ্র – আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর পরীক্ষার ব্যবস্থা গড়ে তোলা।ত্রিপুরা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা কেন্দ্র – শিক্ষার্থীদের সরকারি চাকরি ও অন্যান্য প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য সহায়তা প্রদান করা।
সরকারি কর্মচারী ও পেনশনারদের জন্য ৩% ডিএ (Dearness Allowance) এবং ডিআর (Dearness Relief) বৃদ্ধির ঘোষণা করা হয়েছে। এই পদক্ষেপ সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “সরকার কর্মচারী ও পেনশনারদের কল্যাণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এই ডিএ বৃদ্ধি তাদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে সহায়ক হবে।”
মুখ্যমন্ত্রীর মতে, “এই বাজেট রাজ্যের ইতিহাসে ব্যতিক্রমী। এর আগে এমন বাজেট প্রত্যক্ষ করা হয়নি।” অর্থনীতির গতিশীলতা বাড়ানো, সামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করা এবং নারীর ক্ষমতায়নকে অগ্রাধিকার দেওয়া—এই তিনটি লক্ষ্যকে সামনে রেখে বাজেট তৈরি করা হয়েছে।
বাজেটে অবকাঠামো উন্নয়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং সামাজিক কল্যাণ প্রকল্পগুলোর জন্য পর্যাপ্ত বরাদ্দ রাখা হয়েছে, যা সামগ্রিকভাবে রাজ্যের সার্বিক উন্নয়নে সহায়ক হবে। ঘাটতি বাজেট থাকা সত্ত্বেও সরকার আশাবাদী যে তারা এই ঘাটতি পূরণ করতে পারবে।