২দিন ব্যাপী আন্তর্জাতিক ভাষা দিবসের অনুষ্ঠানের সমাপ্তি।

প্রতিনিধি অনুপম পাল
কৈলাসহর,ঊনকোটি ত্রিপুরা

“ওরা আমার মায়ের ভাষা কাইরা নিতে চায়! যে ভাষায় কথা কইতো আমার বাপ-দাদায়।।”

এই আবেগঘন কবিতার উদ্ধৃতির মধ্য দিয়ে কৈলাসহর পালিত হল কৈলাসহর প্রেস ক্লাবে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ও মাতৃভাষার গুরুত্ব তুলে ধরে দুদিনব্যাপী নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।

এই বছর মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বৃহৎ পরিসরে কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। ২০ ফেব্রুয়ারী (বৃহস্পতিবার) স্বাস্থ্য শিবির, রক্তদান শিবির ও প্রশাসনিক শিবির অনুষ্ঠিত হয়। বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরীক্ষার পাশাপাশি ওষুধ বিতরণ করা হয়, এবং প্রশাসনিক শিবির থেকে আধার কার্ড, পিআরটিসি, রেশন কার্ড, ম্যারেজ সার্টিফিকেট ইত্যাদি প্রদান করা হয়। এই শিবিরে বিপুল সংখ্যক মানুষ অংশগ্রহণ করেন।

২১ ফেব্রুয়ারি বিকেল চারটায় বসে আঁকো প্রতিযোগিতা ও সাড়ে পাঁচটায় মূল আয়োজিত হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পুর পরিষদের চেয়ারপার্সন চপলা দেবরায়, ভাইস চেয়ারপার্সন নীতিশ দে, মহকুমা শাসক প্রদীপ সরকার, জেলা শিক্ষা আধিকারিক প্রশান্ত কিলিকদার, প্রেস ক্লাব সভাপতি জামাল উদ্দিন, সম্পাদক সুকান্ত চক্রবর্তীসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।

অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট সাহিত্যিক বৈষম্পায়ন চক্রবর্তী এবং চিকিৎসক ও বিশিষ্ট শিল্পী ডাঃ আয়ন রায়।

বৈষম্পায়ন চক্রবর্তী বলেন, “ভাষা কেবল শব্দের সমষ্টি নয়, এটি এক জাতির আত্মপরিচয়ের প্রতীক। ভাষা হারিয়ে গেলে সংস্কৃতি ও ইতিহাসও হারিয়ে যায়। তাই আমাদের মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষা করা একান্ত কর্তব্য।”

ডাঃ আয়ন রায় বলেন, “ভাষা শুধু কথা বলার মাধ্যম নয়, এটি আবেগ ও সৃষ্টিশীলতার বাহক। আমাদের উচিত ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে মাতৃভাষার প্রতি আগ্রহী করে তোলা, যাতে তারা নিজেদের শিকড় ভুলে না যায়।”

সন্ধ্যে থেকে শুরু হওয়া এই অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে রাত প্রায় ৯টা নাগাদ। ২১শে ফেব্রয়ারীকে কেন্দ্র করে অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী সংগীত পরিবেশন করেন শহরের সাংস্কৃতিক সংস্থা “রেঁনেসা”। এছাড়াও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষাকে কেন্দ্র করে কৈলাসহর প্রেস ক্লাবের পক্ষ থেকে একটি স্মরণিকা প্রকাশ করা হয়। যার মলাট উন্মোচন করেন অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিশিষ্টজনেরা।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে কৈলাসহর প্রেস ক্লাবের এই আয়োজন মাতৃভাষার গুরুত্ব নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করছেন শহরের শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ। ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এবং ভাষার প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করে এ ধরনের উদ্যোগ আগামীতেও অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন কৈলাসহর প্রেস ক্লাবের সহ-সভাপতি অনুপম পাল সহ অন্যান্য উপস্থিত ক্লাব সদস্যরা।