কৈলাসহর,প্রতিনিধি অনুপম পাল,ত্রিপুরার প্রথম চা বাগান হীরাছড়া, যা একসময় রাজ্যের গর্ব ছিল, এখন শ্রমিকদের দুর্দশার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। কৈলাসহর বিধানসভায় অবস্থিত প্রায় ১২০ বছরের পুরনো এই বাগানে বর্তমানে প্রায় ছয়শো শ্রমিক পরিবারের বসবাস। তবে এই বাগানের শ্রমিকরা আজও ন্যায্য মজুরি, প্রভিডেন্ট ফান্ড এবং অন্যান্য মৌলিক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। তাদের অভিযোগ, স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি মোছব্বীর আলী তাদের সর্বস্ব লুটে নিচ্ছেন।
হীরাছড়া চা বাগানের বড় অংশজুড়ে উরাং এবং বাউরী সম্প্রদায়ের শ্রমিকরা কাজ করেন। সিলকুট কোম্পানির পর সানসাইন নামে আরেকটি কোম্পানি বাগানটি পরিচালনা করছে বলে দাবি করা হলেও শ্রমিকদের বক্তব্য, উভয় কোম্পানির মালিক হিসেবে নিজেকে পরিচয় দেন মোছব্বীর আলী। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, শ্রমিকদের দিয়ে কাজ করিয়ে তাদের ন্যায্য মজুরি দেন না এবং প্রভিডেন্ট ফান্ডসহ অন্যান্য সুবিধা থেকেও বঞ্চিত করেন।
শ্রমিকদের দাবি, মজুরি চাইলে তাদের সাথে দুর্ব্যবহার এবং অশ্লীল আচরণ করেন মোছব্বীর আলী। এমনকি তাদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করেন। সম্প্রতি শ্রমিকরা লিখিতভাবে মহকুমাশাসক এবং জেলাশাসকের কাছে অভিযোগ জানালেও এখনও কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। শ্রমিকরা আরও অভিযোগ করেছেন, তাদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির জন্য তিনি উরাং এবং বাউরী সম্প্রদায়ের মধ্যে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টি করার চেষ্টা করছেন।
এই সমস্যার প্রেক্ষিতে স্থানীয় বিধায়ক বিরজিত সিনহা জানান, একসময় চিটফান্ড কোম্পানি এই বাগান পরিচালনা করত। চিটফান্ড কেলেঙ্কারির পর বাগানটি স্থানীয় প্রভাবশালীদের হাতে চলে যায়, যাদের মধ্যে মোছব্বীর আলী অন্যতম। তিনি শ্রমিকদের দীর্ঘদিনের বঞ্চনার কথা উল্লেখ করে রাজ্য সরকার এবং শ্রম দপ্তরকে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান। প্রয়োজনে জেলা শ্রম দপ্তরের কার্যালয় ঘেরাও করার হুঁশিয়ারিও দেন তিনি।
বর্তমানে শোষণ থেকে মুক্তি পেতে শ্রমিকরা চান, তারা নিজেদের উদ্যোগে সোসাইটি গঠন করে বাগান পরিচালনার দায়িত্ব নেবেন। তাদের মতে, এর মাধ্যমে তারা নিজেদের মজুরি ও প্রাপ্য সুবিধা নিশ্চিত করতে পারবেন এবং বাগানের পুনরুজ্জীবন ঘটবে।
রাজ্যের প্রথম চা বাগান হীরাছড়া আজ ধ্বংসের মুখে। শ্রমিকদের জীবনযাত্রার উন্নতির জন্য সরকারের অবিলম্বে হস্তক্ষেপ করা জরুরি। শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার এবং সম্মানজনক জীবন নিশ্চিত করতে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবি।