
Oplus_131072
প্রতিনিধি অনুপম পাল
কৈলাসহর,ঊনকোটি ত্রিপুরা
সিঙ্গির বিল হাই স্কুল বর্তমানে এক চরম অরাজকতার সম্মুখীন হয়েছে। বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ইনচার্জ সূর্য মণি সিনহার অবসর গ্রহণের পর দুই মাস পেরিয়ে গেলেও স্কুলের হিসাব-নিকাশ ও প্রশাসনিক দায়িত্ব হস্তান্তর করা হয়নি। এর ফলে স্কুলের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে এবং শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে।
প্রাক্তন ইনচার্জ সূর্য মণি সিনহা ৩১ ডিসেম্বর অবসর গ্রহণ করলেও, এখনও পর্যন্ত নতুন ইনচার্জ মৃদুল চন্দের কাছে বিদ্যালয়ের যাবতীয় হিসাব বুঝিয়ে দেননি। এমনকি, স্কুলের প্রধান শিক্ষকের কার্যালয়ের চাবিও তার কাছেই রয়ে গেছে, যা প্রশাসনিক বিশৃঙ্খলার স্পষ্ট নিদর্শন। নতুন ইনচার্জ চাবি গ্রহণ করতে অস্বীকার করায় বর্তমানে স্কুল কার্যত নেতৃত্বহীন অবস্থায় রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বিদ্যালয় পরিদর্শক ও জেলা শিক্ষা আধিকারিকের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।
বিদ্যালয় পরিদর্শকের দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সূর্য মণি সিনহার বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। তিনি দীর্ঘ ১৯ বছর ধরে স্কুলে শিক্ষকতা করেছেন এবং ১৪ বছর ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। সরকার পরিবর্তনের পর স্কুলের জন্য বরাদ্দ হওয়া লক্ষ লক্ষ টাকা যথাযথভাবে খরচ না করে আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। তৎকালীন স্কুল ম্যানেজিং কমিটির চেয়ারম্যান বিশ্বজিৎ দেববর্মার সহযোগিতায় এই দুর্নীতি সংগঠিত হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বর্তমান কমিটির চেয়ারম্যান অজিত মালাকার।
দুর্নীতির পাশাপাশি প্রশাসনিক অব্যবস্থাপনার ফলে শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। নতুন ইনচার্জ দায়িত্ব না নেওয়ায় শিক্ষার্থীদের ট্রান্সফার সার্টিফিকেট (TC) ইস্যু করা সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়া, চলতি বছরের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও শিক্ষামূলক ভ্রমণও বাতিল হয়েছে। এসব সমস্যার সমাধান না হলে আগামী দিনে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় আরও বিঘ্ন ঘটতে পারে।
বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক কয়েক মাস আগে শিক্ষা দপ্তরে লিখিত অভিযোগ জানালেও এখনও পর্যন্ত কোনও উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এমনকি, বিদ্যালয় পরিদর্শক সূর্য মণি সিনহার পেনশনের অর্ধেক বেতন আটকে রাখলেও তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ফলে তিনি হিসাব বুঝিয়ে দিতে দেরি করলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে তেমন কোনও চাপ দেওয়া হচ্ছে না।
বর্তমানে নতুন ইনচার্জ এই পরিস্থিতির দায়িত্ব নিতে রাজি নন। তার যুক্তি, যতক্ষণ না পর্যন্ত আগের ইনচার্জ হিসাব বুঝিয়ে দেন, ততক্ষণ তিনি দায়িত্ব গ্রহণ করবেন না এবং প্রধান শিক্ষকের কার্যালয়ে প্রবেশ করবেন না। এর ফলে পুরো বিদ্যালয় কার্যত অচল হয়ে পড়েছে।
সিঙ্গির বিল হাই স্কুলের এই দুর্নীতি ও প্রশাসনিক বিশৃঙ্খলা শিক্ষা ব্যবস্থার দুরবস্থার একটি জ্বলন্ত উদাহরণ। শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য প্রশাসনের দ্রুত হস্তক্ষেপ ও দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। অন্যথায়, ভবিষ্যতে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা ও ভবিষ্যৎ আরও বিপদের মুখে পড়বে।