
Oplus_0
প্রতিবেদক: অনুপম পাল | কৈলাসহর
যদি কারো মধ্যে থাকে অটুট নিষ্ঠা, অদম্য ইচ্ছাশক্তি আর অপরাজেয় সংকল্প— তবে ‘অসম্ভব’ শব্দটি শুধুই অভিধানে আটকে থাকে। বাস্তবের পথচলায় তা কোন প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়ায় না। আর এই কথাটিকেই জীবন্ত করে তুলেছেন কৈলাসহরের কন্যা ডা. নাজনীন নাহার বেগম। অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ মেডিকেল সায়েন্সেস (AIIMS), নয়াদিল্লিতে ২০২১ সালে অনুষ্ঠিত ‘ডক্টরেট অফ মেডিসিন’ (Infectious Disease) পরীক্ষায় সর্বোচ্চ স্থান অধিকার করে এক উজ্জ্বল ইতিহাস গড়েছেন তিনি।
এই অভূতপূর্ব সাফল্যের মাধ্যমে ডা. নাজনীন শুধু নিজের স্বপ্ন পূরণ করেননি, বরং পুরো ত্রিপুরাকে এনে দিয়েছেন গর্বের অনুভূতি। তিনি হলেন রাজ্যের ইতিহাসে প্রথম মহিলা চিকিৎসক যিনি ‘ডক্টরেট অফ মেডিসিন’ ডিগ্রি অর্জন করেছেন। এ যেন ত্রিপুরার চিকিৎসাক্ষেত্রে এক নতুন আলোকবর্তিকা জ্বালানোর গল্প।
ডা. নাজনীন মূলত ঊনকোটি জেলার কৈলাসহর মহকুমার অন্তর্গত একেবারে প্রত্যন্ত অঞ্চল কুবজারের বাসিন্দা। তাঁর বাবা আব্দুল কুদ্দুস একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী এবং মা আমিরুন নাহার রাজ্য সরকারি কর্মী। এই মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা মেয়েটি প্রমাণ করে দিয়েছেন— স্বপ্ন দেখার সাহস আর পরিশ্রম থাকলে সবকিছু সম্ভব।
কৈলাসহর নেতাজি বিদ্যাপীঠ ইংরেজি মাধ্যম উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা শেষে তিনি মেডিকেল প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে আগরতলা গভর্নমেন্ট মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস (স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত) সম্পন্ন করেন। তারপর কলকাতায় ট্রপিক্যাল মেডিসিনে এমডি ডিগ্রি অর্জন করেন। তাঁর গবেষণাপত্রগুলি আন্তর্জাতিক জার্নালে স্থান পেয়ে চিকিৎসা বিজ্ঞানে নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে।
এই সফলতা যেন শুধু তাঁর একার নয়— কুবজার মাটি, কৈলাসহরের বাতাস আর ত্রিপুরার প্রতিটি কিশোর-কিশোরীর জন্য এক নতুন প্রেরণার গল্প। অনেকেই এখন বিশ্বাস করতে শুরু করেছে, “আমি পারি” এই মন্ত্রে ভর করেই জয় সম্ভব।
রাজন্য আমলের রাজধানী কৈলাসহরের কোণায় কোণায় আজ একটাই নাম — নাজনীন। একান্ত সাধারণ পরিবেশ থেকে উঠে এসে তিনি হয়ে উঠেছেন অসাধারণ এক দৃষ্টান্ত। তাঁর সাফল্যে শুধু কুবজারের নয়, গোটা ত্রিপুরা আজ গর্বিত। তাঁর এই পথচলা একটাই কথা বলে— মেয়েরা চাইলেই আকাশ ছুঁতে পারে।