
Oplus_131072
প্রতিনিধি অনুপম পাল,কৈলাসহর
ত্রিপুরা মধ্যশিক্ষা পর্ষদের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ফল প্রকাশের দিনটি যেন এক আনন্দ উৎসবের দিন হয়ে উঠেছিল কৈলাসহর মহকুমায়। এই অঞ্চল জুড়ে প্রতিটি বিদ্যালয়ে ছড়িয়ে পড়ে উত্তীর্ণ ছাত্রছাত্রীদের হাসি, আত্মবিশ্বাস আর স্বপ্নের উজ্জ্বল ঝলকানি। তবে এই সাফল্যের আলোর মাঝে দুটি নাম আজ বিশেষভাবে আলোচিত—আফসানা নাসরীন ও অঙ্গিতা চন্দ।
কৈলাসহর উচ্চতর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রী আফসানা নাসরীন কলা বিভাগে ৪৬৯ নম্বর পেয়ে মহকুমায় সর্বোচ্চ স্থান অধিকার করেছে। প্রতিটি বিষয়েই তার লেটার মার্ক—এ যেন তার কঠোর অধ্যবসায় ও আত্মপ্রত্যয়ের এক জ্বলন্ত প্রমাণ। লক্ষীপুর গ্ৰাম পঞ্চায়েতের কুবঝার গ্রামের সাধারণ এক পরিবার থেকে উঠে আসা আফসানা শুধুমাত্র বিদ্যালয়ের গর্ব নয়, গোটা মহকুমার অহংকার।
আফসানার সাফল্যের গল্পটা কেবল পড়ালেখার সীমায় আবদ্ধ নয়—এটি একটি পরিবারের স্বপ্ন, পরিশ্রম, ও আত্মত্যাগের প্রতিফলন। বাবা আত্তর আলী ও মা হাছিয়া বেগম, দুজনেই তাদের মেয়ের পড়াশোনার জন্য যে আত্মত্যাগ করেছেন, তা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। আফসানা জানায়, মা-বাবা, স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং তার তিনজন গৃহশিক্ষকের সহায়তাতেই সে এই উচ্চতর স্থান অর্জন করতে পেরেছে। ভবিষ্যতে আইন নিয়ে পড়ার ইচ্ছা তার, তবে আপাতত সে ইতিহাসে স্নাতক করতে চায় রামকৃষ্ণ মহাবিদ্যালয়ে।
এই বিদ্যালয়ের আরেক উজ্জ্বল মুখ—অঙ্গিতা চন্দ। কাচরঘাট এলাকার দুঃস্থ পরিবারের সন্তান, মা-বিহীন অঙ্গিতা উচ্চমাধ্যমিকে ৪২৭ নম্বর পেয়েছে। একদিকে বাবার অসুস্থতা, অন্যদিকে সংসারের দায়িত্ব—তার জীবনে যেন প্রতিটি দিন এক যুদ্ধ। কিন্তু এই কিশোরী হার মানেনি। পড়াশোনার ফাঁকে টিউশনি করে বাবার ও ছোট বোনের মুখে আহার তুলে দেওয়া—এই সংগ্রামের মধ্যেও সে স্বপ্ন দেখে, সে এগিয়ে যেতে চায়।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রমানাথ রায় জানান, এবছর উচ্চমাধ্যমিকে ১৩ জন ফার্স্ট ডিভিশন ও ২৮ জন সেকেন্ড ডিভিশন পেয়েছে। মাধ্যমিকেও সাফল্যের হার আশাব্যঞ্জক। উচ্চমাধ্যমিকে ৯১ শতাংশ ও মাধ্যমিকে ৯২ শতাংশ পাসের হার নিয়ে বিদ্যালয়টি মহকুমার অন্যান্য বনেদী প্রতিষ্ঠানের সাথে প্রতিযোগিতায় সমানতালে এগিয়ে চলেছে।
এই সাফল্যের পরিসংখ্যান আমাদের কাছে শুধুমাত্র সংখ্যার হিসাব নয়। প্রতিটি সংখ্যার পেছনে আছে শত শত গল্প, হাসি-কান্না, ঘাম আর ত্যাগ। আফসানা ও অঙ্গিতার গল্প সেইসব গল্পের প্রতীক—যেখানে স্বপ্ন, সঙ্কল্প ও সংগ্রাম এক হয়ে জন্ম দেয় জীবনের নতুন অর্থ।
সমাজের, সরকারের, এবং আমাদের সকলের দায়িত্ব—এই দীপ্ত সন্তানদের পাশে দাঁড়ানো, যাতে তারা আরও উঁচুতে উঠতে পারে। কারণ, একটি বিদ্যালয়ের সাফল্য মানেই একটি সমাজের সম্ভাবনা। কৈলাসহরের এই সাফল্য সংস্কৃতির এই শহরের সকলকে গর্বিত করে, আবার নতুন করে ভাবায়—যদি সুযোগ দেওয়া যায়, তাহলে প্রতিটি অঙ্গিতা ও আফসানা একদিন ইতিহাস তৈরি করবে।