
প্রতিনিধি অনুপম পাল,কৈলাসহর
একজন প্রবীণ সাংবাদিককে পুড়িয়ে মারার ষড়যন্ত্র—এটা কোনো সাধারণ ঘটনা নয়, গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভকে লক্ষ্য করে চালানো হয়েছে পরিকল্পিত হামলা। আর এই ঘটনার পর চারদিন পার হলেও প্রশাসনের নিস্পৃহ, নির্লজ্জ ভূমিকায় সাংবাদিক সমাজ ক্ষোভে ফুঁসছে।
গত ৬ এপ্রিল রবিবার গভীর রাতে উত্তর ত্রিপুরার দামছড়া এলাকায় প্রবীণ ও প্রতিবাদী কলম পত্রিকার সাংবাদিক ফকর উদ্দিনের বসত বাড়িতে নাশকতার আগুন লাগানো হয়। ঘরে ঢেলে দেওয়া হয় পেট্রোল, ফুটো করে দেওয়া হয় জলের ট্যাঙ্ক—একটি পরিবারের প্রাণ নিয়ে খেলা করে যায় দুষ্কৃতীরা। ভাগ্যের জোরে প্রাণে বেঁচে গেলেও পুড়ে ছাই হয়ে যায় সাংবাদিকের ঘরবাড়ি।
এই ঘটনায় প্রশাসনের নীরবতা এবং পুলিশের গাফিলতি চরম মাত্রায় পৌঁছেছে। বুধবার সাংবাদিক ফকর উদ্দিনের বাড়ি পরিদর্শনে যান আগরতলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও হেডলাইন্স ত্রিপুরার এডিটর প্রণব সরকার, প্রতিবাদী কলম পত্রিকার সম্পাদক অনল রায় চৌধুরী সহ একঝাঁক সাংবাদিক প্রতিনিধি। সঙ্গে ছিলেন জেলার বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরাও।
সরজমিন পরিদর্শনে গিয়ে প্রেস ক্লাব সভাপতি স্পষ্ট বলেন—এটি নিছক আগুন লাগার ঘটনা নয়, এটি পরিকল্পিত হত্যা প্রচেষ্টা। সাংবাদিক ফকর উদ্দিনের লেখালেখির ফলেই এই আগুন লাগানো হয়েছে। সংবাদিকের পরিবারের জলের উৎস পর্যন্ত বন্ধ করে দেওয়ার মতো নৃশংসতা দুষ্কৃতীরা দেখিয়েছে।
তবে সবচেয়ে লজ্জার, দুঃখজনক দিক হলো—ঘটনার চারদিন পরও দামছড়া থানার ওসি কোনও ফার্স্ট ইনফর্মেশন রিপোর্ট গ্রহণ করেননি, স্বপ্রণোদিতভাবে কোনও মামলা শুরু করা হয়নি। যখন রাষ্ট্রের দায়িত্ব গণমাধ্যম রক্ষায় সুরক্ষাবলয় তৈরি করা, তখন পুলিশ প্রশাসন চুপচাপ বসে থেকে প্রমাণ করছে—তারা অপরাধীর পক্ষেই নীরব সমর্থন জুগিয়ে চলেছে।
প্রেস ক্লাব সভাপতি এদিন থানার ওসিকে প্রমাণসহ সমস্ত তথ্য তুলে ধরেন এবং স্পষ্ট ভাষায় জানান—২৪ ঘন্টার মধ্যে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করতে হবে। যত বড় শক্তিধরই হোক না কেন, আইনের আওতায় আনতে হবে। অন্যথায় সাংবাদিক সমাজ পথে নামবে, শুরু হবে প্রতিবাদ, পথ অবরোধ, রাজ্য জুড়ে আন্দোলন।
এই ঘটনা শুধু একজন সাংবাদিকের উপর আক্রমণ নয়—এটি বাকস্বাধীনতা, সত্য উদঘাটনের অধিকার এবং সাংবাদিকতার উপর কুৎসিত চপেটাঘাত। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের একজন প্রতিবাদী সাংবাদিকের উপর এমন আক্রমণ শুধু ব্যক্তিগত ক্ষতি নয়, এটি সামগ্রিকভাবে সমাজ ও গণতন্ত্রের ক্ষতিসাধন।
আগরতলা প্রেস ক্লাব সহ সমস্ত গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের কণ্ঠে এখন একটাই সুর—এই ন্যক্কারজনক ষড়যন্ত্রের বিচার চাই, অবিলম্বে দোষীদের গ্রেফতার চাই। প্রশাসনের দৃষ্টিশক্তি যদি এখনও না খোলে, তবে সাংবাদিক সমাজের সড়ক আন্দোলনই তাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেবে—সত্যকে দাবিয়ে রাখা যায় না।