
Oplus_131072
প্রতিনিধি অনুপম পাল, কৈলাসহর
কৈলাসহরের বিধায়ক বীরজিৎ সিনহার বাসভবনে আজ এক সাংবাদিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে সতের মেয়াদি হাওরে জল ভিত্তিক ইকো পার্ক প্রকল্প নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি। তিনি বলেন, এই প্রকল্পের ফলে জমির মালিকদের স্বার্থ রক্ষা হচ্ছে না, বরং তাদের উপর জোরজবরদস্তি করা হচ্ছে।
বিধায়ক জানান, বামফ্রন্ট আমলেও এই প্রকল্পের পরিকল্পনা করা হলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। বর্তমানে জমির মালিকদের নিয়ে একটি কোপারেটিভ সোসাইটি গঠন করা হলেও, পরবর্তীতে তা স্থানীয় সেল্ফ হেল্প গ্রুপ “গঙ্গা”কে দিয়ে দেওয়া হয়। কিছুদিন আগে গঙ্গা গ্রুপ লিখিতভাবে জমির মালিকদের জমি ফেরত দিলেও বাস্তবে কৃষকদের সেখানে যেতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। এমনকি, কৃষকদের লাঠি নিয়ে তাড়া করার ঘটনাও ঘটছে, যা গভীর উদ্বেগের বিষয়।
বিধায়ক বলেন, প্রকল্পের জন্য কৃষকদের কাছ থেকে স্বাক্ষর নেওয়া হলেও তা আইনসম্মত নয়। কানি প্রতি মাত্র ৩,০০০ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হচ্ছে, যা কৃষকদের প্রকৃত ক্ষতির তুলনায় নগণ্য। কালা সিনহা নামে এক কৃষকের জমি জোরপূর্বক নেওয়া হলে, তিনি আদালতের দ্বারস্থ হন এবং কোর্টের রায়ে জমি ফিরে পান। তবে, আশ্চর্যের বিষয় হলো—মনোরঞ্জন ঘোষ নামে এক ব্যক্তির নামে জমি না থাকলেও, প্রকল্প সংক্রান্ত নথিতে তার স্বাক্ষর রয়েছে।
বিধায়ক আরও অভিযোগ করেন, অনেক কৃষক প্রকল্পের বিরোধিতা করলেও তাদের মতামতের কোনো গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। ১১০ জন জমির মালিকের মধ্যে ৪৯ জন কৃষক জমি দিতে রাজি নন, অথচ তাদের মতামত উপেক্ষা করে প্রকল্প বাস্তবায়নের চেষ্টা চলছে। তিনি আরও জানান, এক মাছ বিক্রেতাকে শুধু তার বাবার স্বাক্ষর না থাকার কারণে হুমকি দিয়ে বলা হয়েছে, সে বাজারে মাছ বিক্রি করতে পারবে না—যা সম্পূর্ণ অন্যায়।
বিধায়ক বীরজিৎ সিনহা বলেন, রাজ্য সরকারের মন্ত্রীরা প্রকল্প সম্পর্কে প্রকাশ্যে কিছু বলছেন না। সরকারের দাবি, সতের মেয়াদি হাওরের জমিতে ধান চাষ হয় না, কিন্তু বাস্তবে সেখানে বছরে ১৮,০০০ টাকার ধান উৎপাদন হয়। অথচ, ক্ষতিপূরণ হিসেবে কৃষকদের মাত্র ৩,০০০ টাকা দেওয়া হচ্ছে, যা গ্রহণযোগ্য নয়।
তিনি আরও বলেন, যদি প্রকল্পটি মাঝপথে বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে কৃষকদের বিশাল ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে। তাছাড়া, হাওরের মাঝখানে প্রকল্প বাস্তবায়ন করলে আশপাশের জলাবদ্ধতা বৃদ্ধি পাবে এবং কৃষিজমি নষ্ট হবে। তাই, তিনি সরকারকে প্রকল্প নিয়ে স্বচ্ছতা বজায় রাখার এবং কৃষকদের মতামত নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের আহ্বান জানান।
এই সাংবাদিক সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন জেলা কংগ্রেস সভাপতি বদরুজ্জামান, কংগ্রেস নেতা রুদ্রেন্দু ভট্টাচার্য, আইনজীবী নরসিংহ দাস সহ অন্যান্যরা। বিধায়ক দাবি করেন, উন্নয়নের নামে কৃষকদের উপর জোরজবরদস্তি না করে, সবার স্বার্থ বিবেচনা করে প্রকল্প বাস্তবায়িত করতে হবে।