
প্রতিনিধি অনুপম পাল,কৈলাসহর
বছরের পর বছর শ্রম আর ঘামে চায়ের পাতা তুলে এনে যে শ্রমিকরা রাজ্য ও দেশের অর্থনীতিকে মজবুত করেছেন, আজ তারাই বঞ্চনার শিকার। দীর্ঘদিন ধরে মজুরি বৃদ্ধি না হওয়া, প্রভিডেন্ট ফান্ড ও ন্যূনতম সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত থাকা, শিশুদের দিয়ে কাজ করানোর মতো অমানবিক বাস্তবতার বিরুদ্ধে অবশেষে গর্জে উঠলেন কৈলাসহরের গোলকপুর চা বাগানের শ্রমিকরা।
আজ সকাল থেকেই ত্রিপুরা চা মজদুর সংঘের গোলকপুর ইউনিটের আহ্বানে শ্রমিকরা শুরু করেন পূর্ণদিবস ধর্মঘট। শুরু হয় রাস্তা অবরোধ, বাগানের অফিস ঘরের সামনে বিক্ষোভ মিছিল এবং দাবির পক্ষে জোরালো স্লোগান। বিক্ষোভের নেতৃত্বে ছিলেন শ্রমিক নেতা সন্তোষ চাষা, দীপক মুন্ডা, কুটু উরাং সহ অন্যান্যরা।
শ্রমিকদের অভিযোগ, বিগত সাত বছরে তাঁদের স্থায়ী করা হয়নি, প্রভিডেন্ট ফান্ডে নাম অন্তর্ভুক্ত হয়নি, দৈনিক মজুরি বাড়ানো হয়নি, এমনকি শৌচাগার, বিশুদ্ধ পানীয় জল, হাসপাতাল যাতায়াতের গাড়ি বা বর্ষাকালে ছাতা ও চপ্পলের মতো ন্যূনতম চাহিদাও পূরণ করা হয়নি। এর চেয়েও মারাত্মক অভিযোগ, বাগানে শিশু শ্রমিক ব্যবহার হচ্ছে—চা শ্রমিকদের পরিবার থেকে শিশুদের কম মজুরিতে কাজ করিয়ে, বাইরে থেকে লোক এনে বেশি মজুরি দিয়ে কাজ করানো হচ্ছে।
প্রতিবাদ শুরু হতেই গোলকপুর চা বাগান চত্বর হয়ে ওঠে উত্তপ্ত। শ্রমিকরা প্রথমে শ্রীরামপুর থেকে ঈশান চৌধুরী পাড়া যাবার রাস্তাটি অবরোধ করে। পরে, বাগানের অফিস ঘরের সামনে মালিক কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধি সুবীর বাবু পৌঁছালে, শ্রমিকদের ক্ষোভ চরমে পৌঁছায়।
সান্ত্বনার বাণী শোনাতে চাইলেও প্রথমদিকে শ্রমিকদের ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন সুবীর বাবু, অভিযোগ এমনই। উত্তেজনা প্রশমিত হলে শুরু হয় আলোচনার পর্ব। ১৭ দফা দাবি তুলে ধরেন শ্রমিকরা।
আলোচনার শেষে মালিক পক্ষের প্রতিনিধি আশ্বাস দেন, আগামী এক মাসের মধ্যে মালিক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পর্যালোচনা করে দাবিগুলি বাস্তবায়নের প্রচেষ্টা করা হবে। এই আশ্বাসে আপাতত ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়েছে।
তবে শ্রমিক নেতা সন্তোষ চাষা স্পষ্ট ভাষায় বলেন, “যদি এক মাসের মধ্যে বাস্তবায়নের কোনও লক্ষণ না দেখা যায়, তবে ত্রিপুরা চা মজদুর সংঘের গোলকপুর ইউনিট বৃহত্তর আন্দোলনে নামবে।”