
Oplus_0
প্রতিবেদন। অনুপম পাল। কৈলাসহর
রবিবারের দুপুর তখন একেবারেই সাধারণ ছিল দূর্গাপুরের মানুষের কাছে। কিন্তু একটু পরেই সেই দুপুর পরিণত হয় এক অন্ধকার অধ্যায়ে। কৈলাসহরের দূর্গাপুর এলাকার নিঃস্ব পরিবার মন্তোষ দাসের ঘরে ছড়িয়ে পড়ে এক বেদনার্ত নিস্তব্ধতা—প্রাণহীন হয়ে পড়ে অষ্টম শ্রেণির ছাত্র মনোময় দাস।
চৌদ্দ বছরের এক কিশোর, যার চোখে ছিল বড় হওয়ার স্বপ্ন, মায়ের মুখে হাসি ফোটানোর আশা—সে আজ নেই। ব্যায়াম করতে গিয়ে নিজের ঘরের সিলিং-এ কাপড় বেঁধে ঝুলতে গিয়ে দুর্ঘটনাবশত প্রাণ হারায় মনোময়। সেদিন তার মা-বাবা ছিলেন ঘরের বাইরে, কর্মজীবনের তাগিদে। আর সেই ফাঁকেই জীবন থেমে গেল ছোট্ট মনোময়ের।
জীবনের এত অল্প পথ পেরিয়েই যে ছেলেটি হারিয়ে গেল, সে ছিল শান্ত স্বভাবের, মেধাবী, হাসিখুশি এবং সবার প্রিয়। পরিবারের স্বপ্ন, আশার আলো এবং প্রতিবেশীদের ভালোবাসার কেন্দ্রবিন্দু ছিল মনোময়। তার ছোট ছোট ইচ্ছা, ব্যায়ামের প্রতি আগ্রহ, নিজের শরীর গঠনের নিরীহ চেষ্টা—সবকিছুই যেন আজ এক অসহায় প্রশ্নচিহ্ন।
যখন বিকেলে মা-বাবা বাড়ি ফিরলেন, তখন ঘরের দৃশ্য দেখে মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে কান্নার রোল। নিথর ছেলের ঝুলন্ত দেহ দেখে মা যেন পাথর হয়ে যান, আর বাবা—নিজেকে আর সামলাতে পারেন না। সেই অসহ্য মুহূর্তে প্রতিবেশীরা ছুটে আসেন, কিন্তু ততক্ষণে সব শেষ।
কৈলাসহর থানার পুলিশ এসে মনোময়ের দেহ উদ্ধার করে নিয়ে যায় মহকুমা হাসপাতালে। সেখানকার চিকিৎসক জানান, মনোময় আর নেই।
ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে থানার অফিসার আশীষ দাস জানান, এটি একটি মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। প্রতিবেশী মিলন দাস কাঁদতে কাঁদতে বলেন, “মনোময় খুব শান্ত ছেলে ছিল। কারও সঙ্গে কোনোদিন ঝগড়া করেনি। তার মতো ছেলেরা বড় হয়ে সমাজের গর্ব হতে পারতো।”
সত্যিই, একটি সম্ভাবনাময় প্রাণ হারিয়ে গেল এক মূর্হূতের অসতর্কতায়। মনোময় হয়তো জানতই না, তার শরীর গঠনের সরল চেষ্টা এমন বিপজ্জনক রূপ নিতে পারে।
আজ দূর্গাপুর নিঃশব্দ। মনোময়ের বন্ধুরা, প্রতিবেশীরা, এমনকি যারা একবারও দেখেছে তাকে—সবাই এক প্রশ্নে স্থবির, “এমনটা কেন হল?” মনোময়ের মা যেন শোকের ভাষাও হারিয়ে ফেলেছেন। তার নিষ্পাপ মুখখানি চোখে ভেসে ওঠে বারবার, আর প্রশ্ন জাগে—অকালেই কেন নিভে যায় এমন প্রদীপ, যার আলোয় আলোকিত হতে পারতো অনেক পথ?