
Oplus_131072
প্রতিনিধি অনুপম পাল,কৈলাসহর
আজ সকাল আনুমানিক ১০-৩০ মিনিট নাগাদ শহরের প্রাণকেন্দ্রে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড যেন কেবল চারটি দোকান নয়, চারটি পরিবারের স্বপ্ন, সংগ্রাম আর দীর্ঘ দিনের পরিশ্রমকে এক লহমায় ছারখার করে দিয়ে গেল। ভগিনী নিবেদিতা বিদ্যালয়ের বিপরীতে অবস্থিত ববি সেনের ঠান্ডা পানীয় ও বৈদ্যুতিক সরঞ্জামের দোকান থেকেই আগুনের সূত্রপাত। মুহূর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে আগুন, গ্রাস করে আশেপাশের লাইব্রেরি, ঔষধের দোকান ও একটি কাপড়ের দোকান।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকালে আচমকা ধোঁয়া বেরোতে দেখে চিৎকার শুরু করেন স্থানীয়রা। খবর পেয়ে অগ্নিনির্বাপক দপ্তরের দুটি ইঞ্জিন দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায় এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের সহায়তায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালায়। কিন্তু ততক্ষণে সব শেষ। আগুনের লেলিহান শিখায় ভস্মীভূত হয়ে যায় দোকানগুলো।
অগ্নিনির্বাপক দপ্তর সূত্রের খবর, শর্ট সার্কিট থেকেই এই আগুনের সূত্রপাত। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রাথমিকভাবে প্রায় ১ কোটি টাকা বলে ধারণা করা হচ্ছে। দোকানগুলোর মালিকরা চোখের সামনে নিজেদের জীবনের পুঁজিকে পুড়ে যেতে দেখে ভেঙে পড়েছেন। কারও কারও গলায় ছিল হাহাকার—”সব ছিল ওই দোকানটায়। ছেলে-মেয়ের ভবিষ্যৎ, সংসারের খরচ,সব পুড়ে ছাই হয়ে গেল। এখন কী করে বাঁচব?”
একজন দোকান মালিক কান্নাভেজা কণ্ঠে বলেন,”এই দোকানটা গড়তে আমার ১৫ বছর লেগেছে। এখন আবার নতুন করে শুরু করার মতো সামর্থ্য তো নেই।”
আর এক মহিলাকে দেখা যায় নিজের স্বামীর পুড়ে যাওয়া দোকানের সামনে বসে নির্বাক হয়ে থাকতে। কোনো কথা নেই, কেবল ফুঁপিয়ে কাঁদছেন। চারপাশে মানুষের ভিড়, কিন্তু তাঁর কান্নার শব্দ যেন ছাপিয়ে যাচ্ছে চারদিকের কোলাহল।
ঘটনার খবর পেয়েই ছুটে আসেন পুর পরিষদের চেয়ারপার্সন চপলা দেবরায়, ভাইস চেয়ারপার্সন নীতিশ দে ও বিজেপি মন্ডল সভাপতি প্রীতম ঘোষ। এছাড়াও ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসেন সমাজ কল্যাণ ও সমাজ শিক্ষা দপ্তরের মন্ত্রী টিংকু রায়। তিনি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দেন।
এই ভয়াবহ ঘটনার পর শহরের নাগরিকদের মধ্যে আতঙ্ক ও বেদনার ছায়া নেমে এসেছে। যেকোনো মুহূর্তে জীবন-জীবিকা কেমন করে ছিন্নভিন্ন হয়ে যেতে পারে, তা যেন আরও একবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল আজকের এই দুর্ঘটনা।
প্রশাসনের উচিত হবে যত দ্রুত সম্ভব ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়ানো, যাতে তাঁদের জীবনে নতুন করে আশার আলো জ্বলে ওঠে। কারণ পুড়ে যাওয়া শুধু দোকান নয়—সেটা ছিল কারও স্বপ্ন, কারও একমাত্র অবলম্বন।