
প্রতিনিধি অনুপম পাল,কৈলাসহর
ঊনকোটি জেলার নিভৃত এক গ্রাম লাল ডহর। ছায়াঘেরা পথ, ধানখেতের ঢেউ, আর নিস্তব্ধ দুপুরের মাঝে এখানে জন্ম ও বড় হয়ে ওঠা এক উজ্জ্বল প্রতিভার—নাম বিপাশা দেব। ১৯ বছর বয়সী এই কুমারী শিক্ষার্থী এবার সেন্ট্রাল বোর্ড অব সেকেন্ডারি এডুকেশন (CBSE) পরিচালিত উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় ৯৫.৬% নম্বর পেয়ে কুমারঘাট মহকুমায় প্রথম স্থান অর্জন করে এলাকাবাসীর চোখে জল এনে দিয়েছেন আনন্দে।
ফটিকরায় লাল ডহরের বনমালী দেব ও শিবানী চৌধুরী দেবের একমাত্র কন্যা বিপাশা। ছোটবেলায় পড়াশোনার শুরু ফটিকরার আইডল নার্সারি স্কুলে। সেখান থেকে কুমারঘাট হোলিক্রস উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত শিক্ষাজীবন। কিন্তু উচ্চমাধ্যমিকে আরও ভালো সুযোগের আশায় পরিবারকে ছেড়ে একাই আগরতলার ভাড়া বাড়িতে থেকে শিশু বিহার স্কুলে ভর্তি হয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যায় বিপাশা। এবং সেই সিদ্ধান্ত যে কতটা সঠিক ছিল, তা আজকের এই ফলাফলেই প্রমাণিত।
সর্বমোট ৪৭৮ নম্বর, পাঁচটি বিষয়েই লেটার—এই সাফল্য এসেছে নিরন্তর অধ্যবসায়, আত্মনিয়ন্ত্রণ ও কঠোর পরিশ্রমের ফসল হয়ে। শুধু পরিবারের নয়, গোটা কুমারঘাট মহকুমা আজ গর্বিত তার এই সাফল্যে।
বিপাশার মা শিবানী দেব বলেন, “ও অনেক কষ্ট সহ্য করে আজ এই জায়গায় পৌঁছেছে। রাত্রি জেগে পড়াশোনা, আত্মীয়দের থেকেও দূরে থেকে একা একা লড়াই করেছে। তার এই কৃতিত্ব আমাদের কাছে অমূল্য।”
বাবা বনমালী দেব আবেগাপ্লুত কণ্ঠে জানান, “গ্রাম থেকে মেয়ে এভাবে উঁচুতে উঠবে, কল্পনাও করিনি। তবে আমরা ওর প্রতি বিশ্বাস রেখেছিলাম, আর ও সেই বিশ্বাসকে সম্মান দিয়েছে।”
এই কৃতিত্ব শুধুই ব্যক্তিগত নয়—এ এক সামাজিক বার্তা। ছোট গ্রাম থেকে, সীমিত সুযোগ নিয়ে, অদম্য মনোবল ও সঠিক দিকনির্দেশনায় এগিয়ে যাওয়া সম্ভব—এই বিশ্বাস আজ নতুন করে জন্ম দিয়েছে বিপাশা।