
জম্মু ও কাশ্মীরের পাহেলগামের শান্ত প্রকৃতির বুক চিরে হঠাৎই নেমে আসে এক বিভীষিকাময় বিকেল। পর্যটনের খুশির মুহূর্ত মুহূর্তে রূপ নেয় কান্নার বন্যায়। সেই হৃদয়বিদারক ঘটনার একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী পল্লবী — যিনি তাঁর স্বামী মঞ্জুনাথ রাও-কে হারিয়েছেন সন্ত্রাসীদের নির্মম গুলিতে।
সেদিন তিনি ভাবেননি, চোখের সামনে তাঁর পৃথিবীটা এক নিমিষে ভেঙে পড়বে। পল্লবী প্রথমে ভেবেছিলেন, হয়ত কোনও নিরাপত্তা মহড়া চলছে। কিন্তু মুহূর্তেই সেই ভুল ভেঙে যায় — গুলির শব্দ, আতঙ্কে ছুটে চলা মানুষ, আর মাটিতে লুটিয়ে পড়া তাঁর স্বামী, রক্তে ভেসে যাচ্ছে পথ।
চোখের সামনে ভালোবাসার মানুষটির নিথর দেহ দেখে পল্লবী আর নিজেকে আটকাতে পারেননি। তিনি নিজেই সন্ত্রাসীদের সামনে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে বলেছিলেন, “আমাকেও মেরে ফেলো।” কিন্তু এক সন্ত্রাসী ঠান্ডা গলায় জবাব দেয় — “আমি তোমাকে মারব না… মোদীকে গিয়ে বলো।” সেই কথাগুলি যেন এখনও ধ্বনিত হয় পল্লবীর কানে, প্রতিটা নিঃশ্বাসে তার রক্ত হিম করে দেয়।
এই একটি বাক্য যেন বহু প্রশ্ন তুলে দেয় — কেন এই হত্যাযজ্ঞ? কার বিরুদ্ধে এই রাগ? একজন সাধারণ নাগরিক, যিনি শুধু তার পরিবার নিয়ে ছুটি কাটাতে গিয়েছিলেন, তিনি কেন এই সহিংসতার শিকার হবেন?
পল্লবীর যন্ত্রণা শুধু ব্যক্তিগত শোক নয়, এটি একটি গোটা দেশের সামনে তুলে ধরে একটি গভীর রাজনৈতিক ও মানবিক প্রশ্ন। এই হত্যাকাণ্ড শুধু একজন স্বামীর প্রাণ নেয়নি, ছিন্ন করেছে একজন স্ত্রীর সব স্বপ্ন, কেঁপে উঠেছে ভারতের অন্তরাত্মা।
পল্লবী বেঁচে আছেন, কিন্তু প্রতিদিন এক অসম লড়াই চালিয়ে যেতে হবে তাকে। তিনি একজন সাক্ষী — এমন এক সত্যের, যা আমরা প্রায়ই ভুলে যেতে চাই।
এই ঘটনাটি আমাদের আরেকবার মনে করিয়ে দেয়, যে শান্তি এখনো অধরা, যে সন্ত্রাস এখনও বেঁচে আছে, আর যে প্রতিটি ক্ষত শুধু একজন মানুষের নয়, গোটা জাতির।