
প্রতিনিধি অনুপম পাল,কৈলাসহর
বর্তমান সময়ে দেশে মানসিক সমস্যায় ভোগা মানুষের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। প্রতিদিন হাসপাতালের বহির্বিভাগে আসা মোট রোগীর প্রায় ৬০ থেকে ৭০ শতাংশই কোনো না কোনো মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত। এর ফলে স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর ওপর ব্যাপক চাপ তৈরি হচ্ছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীদের অনেক সময় অপ্রয়োজনীয় ওষুধ লিখে দিতে হচ্ছে, যার সুফলের চেয়ে কুফলই অনেক সময় বেশি হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, মানসিক রোগীদের অনেকেই বুঝতেই পারেন না যে তারা আসলে মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত। এ ধরনের রোগীর সঠিক সমাধান কেবল ওষুধ খাওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এর সঙ্গে প্রয়োজন বিহেভিয়ার থেরাপি, লাইফস্টাইল মডিফিকেশন এবং নিয়মিত সাইকিয়াট্রিক কাউন্সেলিং। অর্থাৎ একটি মাল্টিমোডালিটি এপ্রোচ জরুরি। কিন্তু বহির্বিভাগে ভিড়ের কারণে প্রতিটি রোগীকে ৩০-৪০ মিনিট সময় দেওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়াচ্ছে চিকিৎসকদের।
চিকিৎসকদের মতে, বর্তমানে যেসব মানসিক রোগ সবচেয়ে বেশি দেখা দিচ্ছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে— মেজর ডিপ্রেশন, ফাংশনাল বাওয়েল ডিসঅর্ডার, অবসেসিভ কমপালসিভ ডিসঅর্ডার (OCD), অ্যাংজাইটি, প্যানিক অ্যাটাক, বাইপোলার ডিসঅর্ডার, নিউরোসিস, স্কিজোফ্রেনিয়া এবং মুড ডিসঅর্ডার।
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, কিছু নিয়মিত অভ্যাস গড়ে তুললে মানসিক সমস্যার স্থায়ী বা অস্থায়ী সমাধান পাওয়া সম্ভব। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য—মোবাইল বা ডিজিটাল ডিভাইসের স্ক্রিন টাইম কমানো।প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট শারীরিক কার্যকলাপ—খেলা, ব্যায়াম বা হাঁটা।পরিবারের সদস্য বা আপনজনের সঙ্গে নিয়মিত সময় কাটানো। শখের কাজের (গান, সংগীত, গার্ডেনিং, রান্না ইত্যাদি) জন্য সময় বরাদ্দ করা।সুষম খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখা—দুটি মিলের মধ্যে ৬-৭ ঘণ্টা ব্যবধান রাখা, রাত ৮টার পর খাবার না খাওয়া।কাঁচা বা সেদ্ধ খাবার বেশি খাওয়া এবং অতিরিক্ত মিষ্টি এড়িয়ে চলা।রাতে ঘুমানোর আগে স্নান করা এবং বিছানায় শুধু ঘুমের সময় থাকা।নেশাজাতীয় দ্রব্য আস্তে আস্তে কমিয়ে আনা বা বর্জন করা।
চিকিৎসকদের অভিমত, মানসিক রোগ মোকাবিলা করতে হলে সমাজের সকল স্তরে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। শুধুমাত্র ওষুধ নয়, জীবনযাত্রায় ইতিবাচক পরিবর্তন ও পরামর্শমূলক থেরাপিই হতে পারে সমস্যার মূল সমাধান।