
Oplus_131072
প্রতিনিধি অনুপম পাল,কৈলাসহর
ফাল্গুনের কৃষ্ণপক্ষ যখন চতুর্দশী তিথির দ্বারপ্রান্তে আসে, সমগ্র হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্তরে এক অনির্বচনীয় অনুভূতি জাগ্রত হয়। মহাশিবরাত্রি—শুধু একটি উৎসব নয়, এটি আস্থার প্রদীপ জ্বেলে শিবতত্ত্বের গভীর সাধনায় নিমগ্ন হওয়ার এক পবিত্র রাত।
এই মহাযোগের দিনে শিব ও পার্বতীর বিবাহের কাহিনি স্মরণ করে লক্ষ লক্ষ ভক্ত নত মস্তকে আশ্রয় নেন মহাদেবের চরণে। কথিত আছে, এই তিথিতেই প্রথম জ্যোতির্লিঙ্গের আবির্ভাব ঘটেছিল, যার থেকে উদ্ভাসিত হয়েছিল সৃষ্টির মহাজাগতিক শক্তি। তাই, এই দিন শুধু পূজা নয়—এ হল আত্মশুদ্ধি ও ভক্তির এক অভাবনীয় পরিক্রমা।
বুধবার, মহাশিবরাত্রির পুণ্যলগ্নে কৈলাসহরের টাউন কালীবাড়ি,পুরাতন কালীবাড়ি প্রাঙ্গণ যেন শিবময় হয়ে উঠেছিল। ভোরের আলো ফোটার সাথে সাথেই শত শত নারী শিবের মাথায় দুধ ও জল ঢেলে পূজায় ব্রতী হয়েছেন। নিঃশব্দে হৃদয়ের প্রার্থনাগুলো যেন ধূপের স্নিগ্ধ সুগন্ধের সঙ্গে মিশে আকাশের অদৃশ্য অলিন্দে পৌঁছে যাচ্ছে। এই প্রার্থনায় লুকিয়ে আছে পরিবারের মঙ্গলকামনা, সুখ-সমৃদ্ধির অভিলাষ।
পাইতুরবাজারের মহাদেব বাড়িতে একই উৎসাহে মুখরিত হয়ে উঠেছিল পরিবেশ। এখানেও ভোরের আলোয় স্তবমন্ত্র ধ্বনিত হচ্ছিল, ধূপ-দীপ-আরতির অপার আলোয় শিবপ্রেমীরা হারিয়ে গিয়েছিলেন এক গভীর আত্মসুধায়। মহাদেব বাড়ি কমিটির সম্পাদক চন্দ্রশেখর সিনহা জানালেন, প্রতি বছরের মতো এবারও এই পুণ্যতিথি সাড়ম্বরে পালিত হচ্ছে। পূজার পাশাপাশি সকল ভক্তের জন্য প্রসাদের ব্যবস্থাও করা হয়েছে, যাতে একাত্মতার অনুভূতি আরও নিবিড় হয়।
কৈলাসহর পুরাতন কালীবাড়ি প্রাঙ্গণে পূজারত এক ভক্ত, শাস্বতী চক্রবর্তী, চোখে আস্থার দীপ্তি নিয়ে বললেন, “এই দিনে শিবের চরণে এসে যেন সমস্ত সংকট দূর হয়ে যায়। সংসারের সব ক্লেশ, সমস্ত ব্যথা শিবের কৃপায় শান্ত হয়।” তার কণ্ঠে এক গভীর আত্মবিশ্বাস, এক অপার ভক্তির অনুভূতি—যা শিবরাত্রির মহিমাকে আরও তাৎপর্যময় করে তোলে।
এই রাতে ভক্তরা উপবাসে, প্রার্থনায় ও জাগরণে কাটান সময়। কারণ বিশ্বাস, শিবরাত্রির একরাত্রির জাগরণ হাজার রাত্রির তপস্যার সমান। এই রাত কেবল শিবের আরাধনার নয়, এটি আত্মবিশ্বাসের, ভক্তির শুদ্ধতম প্রকাশের।
মহাশিবরাত্রির প্রতিটি মুহূর্ত যেন এক নতুন আলো জ্বালে অন্তরের অন্ধকারে। জীবনস্রোতে জড়িয়ে থাকা দুঃখ-কষ্ট-সংকট এক নিমেষে বিলীন হয় মহাদেবের অনুগ্রহে। তাই তো যুগ যুগ ধরে, কালের বিবর্তনে, শিবের মহিমায় আপ্লুত হয়ে মানুষ সঞ্জীবনী শক্তি খুঁজে নেয় এই শিবরাত্রির শাশ্বততায়।
“ওম নমঃ শিবায়”—এই মন্ত্রধ্বনির প্রতিটি স্পন্দন যেন জাগিয়ে তোলে চেতনাকে, উদ্বুদ্ধ করে আস্থার দীপ্তিতে। শিবরাত্রি শুধুই একটি উৎসব নয়, এটি এক আধ্যাত্মিক পরিক্রমা, যেখানে ভক্তির সুধায় সিক্ত হয়ে ওঠে প্রতিটি হৃদয়, প্রতিটি প্রার্থনা।