
সংবাদ প্রতিনিধি। অনুপম পাল। ত্রিপুরা
একসঙ্গে তিনটি কিশোর প্রাণের নিভে যাওয়া… যেন হৃদয় কাঁপিয়ে দেওয়া এক দুঃস্বপ্ন। আজ রাজধানী আগরতলার অরুন্ধতীনগর কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের পুকুরে স্নান করতে গিয়ে জলে তলিয়ে নিথর হয়ে গেল তিনটি তাজা প্রাণ। ববি শুক্লা দাস (১৭), শুভম দেব (১৭) এবং শুভজিৎ দে (১৫)— আর কখনো স্কুল ব্যাগ কাঁধে দেখা যাবে না এই তিন বন্ধুকে। আর কখনো তাদের হাসির শব্দে মুখর হবে না অরুন্ধতীনগরের গলি।
সকালটা ছিল অন্য দিনের মতোই। রোদের তেজ কিছুটা কম, তাই বন্ধুরা মিলে ছুটে গিয়েছিল পরিচিত সেই পুকুরঘাটে, একটু জলতরঙ্গের আনন্দ নিতে। কে জানত, এ আনন্দই পরিণত হবে মৃত্যুর কান্নায়? প্রথমে একজন, তারপরে দুইজন— একে অপরকে বাঁচাতে গিয়ে সবাই তলিয়ে গেল সেই গভীর জলে। আর ততক্ষণে পুকুর পাড়ে অপেক্ষায় অসহায় পিতা-মাতা— কারও গলায় ধ্বনি নেই, শুধু চোখে কান্না আর বুকের ভেতর ছটফট।
স্থানীয়দের প্রচেষ্টায় একজনকে অচেতন অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও বাঁচানো গেল না বাকিদের। দমকল ও পুলিশ এসে উদ্ধার করে বাকি দু’জনের দেহ, নিয়ে যায় জিবি হাসপাতালে। কিন্তু সেখানেই কর্তব্যরত চিকিৎসকরা ঘোষণা করেন— তারা আর নেই।
শুধু পরিবারের বুকেই না, কান্নার ঢেউ উঠেছে গোটা এলাকাতেই। বিধায়ক মীনা রানী সরকার নিজে ছুটে যান ঘটনাস্থলে। মৃতদেহ দেখে তিনি নিজেও বাকরুদ্ধ। কিশোরদের পরিবার কার্যত শোকে পাগলপ্রায়— কোথাও আর্তনাদ, কোথাও স্তব্ধতা।
এদিকে মুখ্যমন্ত্রী অধ্যাপক (ডা.) মানিক সাহা এই হৃদয়বিদারক ঘটনার পর গভীর শোক প্রকাশ করেছেন সামাজিক মাধ্যমে। তিনি লিখেছেন, “জলে ডুবে একসঙ্গে তিনজনের মর্মান্তিক মৃত্যুর খবরে আমি অত্যন্ত মর্মাহত। ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করছি শোকাহত পরিবারগুলিকে এই কঠিন সময়ে শক্তি দিন।” পাশাপাশি প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশও দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
আজ আর ববি, শুভম, শুভজিত নেই। কিন্তু তাদের স্মৃতি ছড়িয়ে রইল বন্ধুর হৃদয়ে, মায়ের কোলের শূন্যতায়, স্কুলের বেঞ্চে, আর আমাদের সবার মনে। এই অকালমৃত্যু যেন আমাদের একটাই বার্তা দেয়— অসতর্কতার এক ফোঁটা দুঃখ, বয়ে আনতে পারে সাগর সমান কান্না।