
প্রতিনিধি অনুপম পাল,কৈলাসহর
ঊনকোটি জেলার কৈলাসহর গৌরনগর ব্লকের অধিনে থাকা ধলিয়ারকান্দি গ্রাম পঞ্চায়েতে বড় ধরনের রাজনৈতিক পরিবর্তনের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। তেসরা মার্চ, সোমবার বিকেলে পঞ্চায়েতের প্রধান রেবা রানী বিশ্বাস ও উপ প্রধান তোফাইল আহমেদের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব জমা দিয়েছেন ছয়জন পঞ্চায়েত সদস্য। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই অনাস্থা শুধুমাত্র গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রশাসনিক ব্যর্থতার বিরুদ্ধে নয়, বরং প্রাক্তন মন্ডলের দুর্নীতি বিরোধী ক্ষোভেরই বহিঃপ্রকাশ।
কৈলাসহর গৌরনগর ব্লকের অধীনে থাকা ১১ আসন বিশিষ্ট ধলিয়ারকান্দি গ্রাম পঞ্চায়েতটি গত নির্বাচনে বিজেপির দখলে ছিল। বিজেপির সাতজন ও কংগ্রেসের চারজন সদস্য নিয়ে গঠিত এই পঞ্চায়েতে এবার বিজেপিরই দুইজন সদস্য জয়ারানী নম ও ফাতেমা বেগম কংগ্রেসের চারজন সদস্য নিভাস নম, খলিলুর রহমান, জসিম আলী এবং বাসিরুন নেছার সাথে একজোট হয়ে প্রধান ও উপ প্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা এনেছেন। এর ফলে বিজেপির অভ্যন্তরীণ টানাপোড়েন আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
পঞ্চায়েত সদস্য জসিম আলী অভিযোগ করেন, “প্রধান ও উপ প্রধান দায়িত্ব পালনে চরম অবহেলা করছেন। তারা নিয়মিত অফিসে আসেন না, কোনো উন্নয়নমূলক কাজ হচ্ছে না, বরং তারা নানা দুর্নীতিতে লিপ্ত।” এই অভিযোগকে কেন্দ্র করেই ছয়জন সদস্য একত্রিত হয়ে জেলা পঞ্চায়েত অফিসারের কাছে অনাস্থা প্রস্তাব জমা দিয়েছেন।
ঊনকোটি জেলা পঞ্চায়েত অফিসার ডেভিড এল. হালাম অনাস্থা প্রস্তাব জমা পড়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন এবং পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে বলে জানান।
ধলিয়ারকান্দির অনাস্থা প্রস্তাবের ঘটনা স্রেফ একটি স্থানীয় প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নয়, বরং এটি রাজ্যের বৃহত্তর রাজনৈতিক পরিবর্তনের অংশ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এর আগে, পয়লা মার্চ কৈলাসহর মন্ডলের অধীনে থাকা নূরপুর গ্রাম পঞ্চায়েতও বিজেপির হাতছাড়া হয়েছিল। বিজেপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল প্রতিদিন তীব্র হচ্ছে এবং একের পর এক পঞ্চায়েত বিজেপির নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছে।
বিজেপি সবসময়ই ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ’-এর স্লোগান দিয়ে উন্নয়নের কথা বলে এসেছে। কিন্তু ধলিয়ারকান্দির পঞ্চায়েত সদস্যদের এই বিদ্রোহ এবং দুর্নীতির অভিযোগ সেই আদর্শের পরিপন্থী বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। প্রাক্তন মন্ডলের দুর্নীতির প্রভাব যে এখন গ্রামীণ স্তরে রয়ে গেছে, এই অনাস্থা তারই প্রমাণ।
এখন প্রশ্ন উঠছে, অনাস্থার পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে? জেলা প্রশাসন ও পঞ্চায়েত দপ্তর কী সিদ্ধান্ত নেয় এবং ধলিয়ারকান্দি গ্রাম পঞ্চায়েতের ভবিষ্যৎ কোন পথে এগোয়, সেটিই এখন দেখার বিষয়।