
oplus_0
✍️প্রতিনিধি অনুপম পাল, কৈলাসহর
ত্রিপুরার ঊনকোটি জেলার ভগবান নগরে অবস্থিত জেলা হাসপাতাল কোয়ার্টার চত্বর যেন বিষাক্ত ধোঁয়ার কারখানায় পরিণত হয়েছে। হাসপাতালের পাশে বেআইনিভাবে চালু থাকা বিটুমিনাস প্ল্যান্ট বা হট মিক্স প্ল্যান্টের বিষাক্ত নির্গমন শুধু বাতাস নয়, নষ্ট করে দিচ্ছে মানুষের ফুসফুস, বিশেষ করে শিশুদের জীবনের ভবিষ্যৎ।আরও ভয়াবহ বিষয়— এই প্ল্যান্ট চালু রয়েছে একাধিক সরকারি নিষেধাজ্ঞা ও চিঠি উপেক্ষা করেই। মালিক আব্দুল মান্নান— যার রাজনৈতিক ‘যোগ’ তাকে করে তুলেছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।
দীর্ঘদিন ধরেই এই প্ল্যান্টের ধোঁয়ার জেরে ঊনকোটি জেলা হাসপাতালের কোয়ার্টারে বসবাসকারী চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা দমবন্ধ পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছেন। সকাল থেকে রাত— ধোঁয়ার ঘনঘটা এমন যে জানালা বন্ধ রেখেও নিস্তার নেই। ঘরের শিশুরা দিন দিন অসুস্থ হয়ে পড়ছে। দুই থেকে পাঁচ বছর বয়সী শিশুরাও আক্রান্ত হচ্ছে শ্বাসকষ্ট ও চর্মরোগে।
মেডিকেল সুপার ডাঃ রোহন পাল আজ বাধ্য হয়ে সংবাদ সম্মেলনে ক্ষোভ উগড়ে দেন। তিনি জানান, প্ল্যান্টের মালিকের বিরুদ্ধে বহুবার জেলা প্রশাসনকে লিখিত অভিযোগ জানানো হয়েছে, অথচ নেই কোনও পদক্ষেপ। শুধু তিনিই নন, তার আগের মেডিকেল সুপার-ও কোয়ার্টারবাসীদের স্বাক্ষর-সহ বহুবার আবেদন জমা দিয়েছিলেন, কিন্তু ফল শুন্য।ডাঃ পাল স্পষ্টভাবে বলেন, “এই ধোঁয়ায় ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।চিকিৎসকের শিশুরা যদি বিষাক্ত বাতাসে দম নিতে না পারে, তাহলে স্বাস্থ্য পরিষেবা কীভাবে দেব আমরা?”
২৩ জুন, ত্রিপুরা পলিউশন কন্ট্রোল বোর্ডকে চিঠি দেওয়ার পর তারা ১ জুলাই থেকে কাজ বন্ধের নির্দেশ দেয়। কিন্তু আজ ১১ জুলাই পেরিয়েও সেই আদেশ মানেনি প্ল্যান্ট মালিক। পরিবেশ আইন লঙ্ঘন হচ্ছে দিনের-পর-দিন, কিন্তু কেউ কিছু করছে না!
৫ ও ৭ জুলাই জেলা শাসক, জেলা পুলিশ সুপার ও মহকুমা পুলিশ আধিকারিক— সকলকে লিখিতভাবে জানানো হলেও নেই কোনও প্রশাসনিক পদক্ষেপ। তাহলে প্রশ্ন উঠছেই— প্রশাসন কি প্রভাবশালীদের হাতের ক্রীড়ানক হয়ে গেছে?
যার বিরুদ্ধে এত অভিযোগ, সেই আব্দুল মান্নান এক সময়ের সিপিআই(এম) অনুগত কর্মী। কিন্তু ২০২৩ সালের নির্বাচনের আগে রাতারাতি শিবির বদলে হয়ে যান শাসকদল ঘনিষ্ঠ। প্রাক্তন বাম বিধায়কের আত্মীয় হিসেবে পরিচিত এই ব্যক্তি এখন সরকারি নির্দেশকে তোয়াক্কা না করে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন— কারণ তার মাথার উপর আছে ‘সরাসরি ছাতা’!
চিকিৎসকদের অভিযোগ, “যেদিন এই প্ল্যান্টে হামলা হয়েছিল কোন এক কারনে, সেদিন পুলিশ মিনিটে হাজির হয়েছিল। কিন্তু হাসপাতাল চত্তরের ডাক্তার,নার্স সহ জেলা হাসপাতালের রোগীরা অসুস্থ হয়ে পড়ছে— এমন চিঠির পর চিঠি গেলেও, পুলিশ আসে না!”
স্থানীয়দের প্রশ্ন,চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রাণনাশের ঝুঁকিতে রেখেও কেন চুপ প্রশাসন? পলিউশন কন্ট্রোল বোর্ডের আদেশ উপেক্ষা করা কি আইনি অপরাধ নয়?যেসব শিশু অসুস্থ হচ্ছে, তাদের চিকিৎসার দায় কে নেবে?রাজনৈতিক যোগ থাকলে কি কোনও বেআইনি কার্যক্রম বৈধ হয়ে যায়?
অনেকের অভিমত,এই প্ল্যান্ট যতদিন চালু থাকবে, ততদিন এই ধোঁয়ায় ঢেকে যাবে প্রশাসনের মুখ। সময় এসেছে, নীরবতা ভাঙার। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পাশেই যদি বিষ তৈরি হয়, তাহলে উন্নয়ন কাকে বলে? এটাই কি ডবল ইঞ্জিনের সুশাসন,প্রশ্ন সর্বত্র।