
✍️ নিজস্ব প্রতিনিধি,ধর্মনগর
রেশন মানেই গরিব মানুষের খাদ্যসুরক্ষা। আর সেই রেশনের ডালেও যদি চুরি হয়, তাহলে সে দুর্নীতির রূপ কতটা ভয়ঙ্কর, তা সহজেই অনুমেয়।
ঠিক এমনই এক ঘটনা সামনে এল চুরাইবাড়ি ফুড গোডাউনে। শুক্রবার NL01Q-0109 নম্বরের একটি ট্রাকে করে গণবণ্টনের ডাল আসে ওই কেন্দ্রে। সরকারি নির্দেশ মোতাবেক কদমতলা ব্লক এলাকার ৩৩টি রেশন শপ এবং আইসিডিএস প্রকল্পের জন্য এই ডাল জিরানিয়া থেকে প্রেরণ করা হয়। অথচ ডাল লোড হয়েছিল বহিঃরাজ্য থেকে — ট্রেনে করে পাঠানো হয়েছিল ‘মহাবীর ডাল মিলস প্রাইভেট লিমিটেড’-এর তরফে।
গাড়ি এসে পৌঁছনোর পর যখন গোডাউনের শ্রমিকরা ডালের বস্তাগুলি আনলোড করছিলেন, তখনই তাদের সন্দেহ হয়। কারণ? বস্তাগুলোর ওজন হাতে ধরেই কিছুটা কম বলে মনে হয়। সঙ্গে সঙ্গে তারা ওজন যন্ত্রে মেপে দেখেন — ৩০ কেজি ওজনের যেসব বস্তা আসার কথা, তার একটিও পূর্ণাঙ্গ নয়! কোনোটা ২৬ কেজি, আবার কোনোটা ২৫ কেজি!
এই চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে আসতেই শুরু হয় তীব্র বিতর্ক। শ্রমিকদের বুদ্ধিমত্তা ও সততার জন্যই এই দুর্নীতির জাল ছিঁড়ে প্রকাশ্যে এসেছে, তা বলাই বাহুল্য।
প্রশ্ন উঠছে—এত বড় পরিমাণে ওজন কমিয়ে মাল পাঠানোর সাহস কীভাবে পেলো মহাবীর ডাল মিলস?জিরানিয়া ফুড কর্পোরেশন, গুদাম বা পরিবহন দপ্তর – কেউ কি একবারও এই বস্তাগুলি পরীক্ষা করেনি?এই ধরনের চুরি কি আগেও হয়েছে, আর ধরা পড়েনি?
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে গোটা কদমতলা ও আশপাশের এলাকায় চরম ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। সাধারণ মানুষের বক্তব্য,“যেখানে গরিবের রেশনের ডাল থেকেও চুরি হচ্ছে, সেখানে আর কিসের ভরসা?”
নানা মহল থেকে জোরালো দাবি উঠেছে—অবিলম্বে এই ঘটনার উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত হোক।যেসব আধিকারিক ও ঠিকাদার এই চক্রে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হোক।ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনা আটকাতে প্রতিটি রেশন মাল যাচাই করার ব্যবস্থা চালু হোক।
এই যদি হয় “গরিবের হক”-এর অবস্থা, তবে “গণবণ্টন” শব্দটার অর্থ কি শুধুই লোকদেখানো একটা ব্যবস্থার নাম হয়ে দাঁড়াচ্ছে?সময় এসেছে গাফিলতির বিরুদ্ধে গর্জে ওঠার।দুর্নীতির ডালপুরি চক্রকে রুখতেই হবে — না হলে গরিবের থালা আরও অনেক বেশি ফাঁকা হবে আগামী দিনে।