প্রতিবেদন নিজস্ব
আগরতলা,পশ্চিম ত্রিপুরা
পৌষ সংক্রান্তি বাঙালির ঐতিহ্যবাহী উৎসবগুলির মধ্যে অন্যতম। ভোজনরসিক বাঙালির জীবনে এই দিনটি মানেই পিঠে-পুলি এবং আনন্দঘন পরিবেশ। গ্রামীণ বাংলার মা-মাসিরা ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে আজও পিঠে তৈরিতে ব্যস্ত থাকেন। অন্যদিকে শহুরে ব্যস্ত জীবনে মিষ্টির দোকানই হয়ে উঠেছে পিঠে-পুলির প্রধান ভরসা।
পৌষ সংক্রান্তিতে সিদ্ধ পুলি, পাটি সাপ্টা, মালপোয়া, তেলের পিঠা, দুধ পুলি, আর পায়েসের মতো রকমারি পিঠে তৈরি হয়। পরিবার ও বন্ধুদের নিয়ে পিঠে ভাগ করে খাওয়া এবং পুর্বপুরুষদের উদ্দেশ্যে ভোগ নিবেদন করা এই উৎসবের অন্যতম অংশ। এক শাশুড়ি মা জানান, পুর্বপুরুষদের থেকে পাওয়া এই প্রথা তারা এখনো পালন করে আসছেন। তিনি আরও জানান, গতকাল রাত থেকেই পিঠে তৈরির কাজ শুরু হয়েছে।
গ্রামে আজও পিঠে তৈরির ধুম লেগে থাকে। ঘরে ঘরে শাশুড়ি মা থেকে বৌমা সবাই মিলে উৎসবের প্রস্তুতিতে মেতে ওঠেন। তবে শহরে ব্যস্ত জীবনে ঘরের তৈরি পিঠে-পুলির জায়গা অনেকটাই দখল করেছে মিষ্টির দোকান। রাজধানীর মিষ্টির দোকানগুলোতে মঙ্গলবার সকাল থেকে ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। পাটিসাপ্টা, দুধপুলি, ভাজা পুলি ইত্যাদির দেদার বিক্রি চলছে।
বর্তমান প্রজন্মের অনেকেই পিঠে তৈরিতে আগ্রহী নন। ডোসা, কাটলেট কিংবা অন্যান্য আধুনিক খাবারের যুগে পিঠে-পুলি যেন হারিয়ে যেতে বসেছে। বয়োজ্যেষ্ঠ মা-মাসিরাই এখন ঘরোয়া পিঠে তৈরির প্রধান ভরসা। তবে অনেকেই মনে করেন, ঘরে তৈরি পিঠের স্বাদ মিষ্টির দোকানের পিঠে কখনোই দিতে পারে না।
পৌষ সংক্রান্তি শুধু খাওয়া-দাওয়ার উৎসব নয়, এটি সামাজিক বন্ধন দৃঢ় করারও একটি বিশেষ দিন। শীতকালীন ফসল তোলার পর বাঙালিরা এই উৎসব উদযাপন করে। আকাশে রঙিন ঘুড়ি ও পিঠে-পুলির স্বাদ এই দিনটিকে বিশেষ করে তোলে। যদিও শীতের প্রকোপ কম থাকায় উৎসবের আমেজ কিছুটা কমেছে বলে মত প্রকাশ করেছেন অনেকে।
পৌষ সংক্রান্তি বাঙালির ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। সময়ের সাথে সাথে উৎসবের ধরন বদলালেও পিঠে-পুলির প্রতি ভালোবাসা আজও অটুট। গ্রাম কিংবা শহর, পিঠে-পুলি ছাড়া এই উৎসব যেন অসম্পূর্ণ। তাই ঐতিহ্যকে ধরে রাখার জন্য নতুন প্রজন্মকে আরও উৎসাহী হওয়া প্রয়োজন, যেন বাংলার সংস্কৃতি চিরকাল অমলিন থাকে।