
Oplus_131072
প্রতিনিধি অনুপম পাল
কৈলাসহর,ঊনকোটি ত্রিপুরা
সরকারের নানা প্রতিশ্রুতি, উন্নয়নের গালভরা কথা, কিন্তু বাস্তব চিত্র কি? কৈলাসহরের ডলুছড়া গ্রামের ৭০টি পরিবার দিনের পর দিন পানীয় জলের অভাবে চরম দুর্ভোগে। তাদের জন্য না আছে ডিপ টিউবওয়েল, না পাম্প মেশিন, না রিং ওয়েল, এমনকি নেই একটি পাকা কুয়োও। বাধ্য হয়ে নোংরা ছড়ার জল পান করা ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না তাদের। আর যখন সেই ছড়াও শুকিয়ে গেছে, তখন পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ হয়ে উঠেছে যে গ্রামবাসীদের আর কিছু করার ছিল না—তারা জাতীয় সড়ক অবরোধ করলেন, প্রতিবাদে নামলেন।
এটাই কি আমাদের উন্নয়নের প্রকৃত চিত্র? যেখানে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকার কোটি কোটি টাকা ব্যয় করছে পরিকাঠামো উন্নয়নের নামে, সেখানে একটি গ্রাম বছরের পর বছর পানীয় জল বঞ্চিত থাকবে কেন? সরকারি আধিকারিকদের কাছে বারবার আরজি জানিয়েও কোনো ফল হয়নি, তাই বাধ্য হয়েই গ্রামবাসীরা আন্দোলনের পথ বেছে নিয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট দপ্তর মাঝে মাঝে গাড়ি দিয়ে জল সরবরাহ করলেও তা এত নগণ্য যে, তা দিয়ে গ্রামবাসীদের প্রয়োজনের সামান্য অংশও মেটে না। এই অমানবিক অবস্থা চলতে থাকলে সাধারণ মানুষের পক্ষে কি ধৈর্য ধরে থাকা সম্ভব? তাই জাতীয় সড়ক অবরোধ করেই নিজেদের দাবি জানাতে হলো তাদের।
সড়ক অবরোধের খবর পেয়ে অবশেষে নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। পানীয় জল ও স্বাস্থ্য বিধি দপ্তরের এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার নির্মল চন্দ্র বিশ্বাস ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন। শেষমেশ গ্রামবাসীদের আশ্বস্ত করা হয় যে, যতদিন স্থায়ী সমাধান না হয়, ততদিন গাড়ি করে পর্যাপ্ত পরিমাণে জল সরবরাহ করা হবে।
কিন্তু প্রশ্ন রয়ে যায়—এই “আশ্বাস” কি বাস্তবায়িত হবে, নাকি এটিও আগের মতোই উপেক্ষিত থেকে যাবে? ডলুছড়ার গ্রামবাসীরা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, যদি এই প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করা হয়, তবে তারা আরও বড় আন্দোলন গড়ে তুলবেন।
এটি শুধু ডলুছড়ার সমস্যা নয়, এটি সারা দেশের বহু গ্রামের বাস্তব চিত্র। পানীয় জল মানুষের মৌলিক অধিকার, কিন্তু সেই অধিকার থেকেই বছরের পর বছর বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। প্রশাসনের এই উদাসীনতা, দায়িত্বজ্ঞানহীনতা কি কখনোই শেষ হবে না? উন্নয়নের গল্প যতই প্রচার হোক, বাস্তব চিত্র কিন্তু বলে দেয়, সরকারের ব্যর্থতার ভার বইতে এখনও বাধ্য হচ্ছে সাধারণ মানুষই।