
দ্যা ইউনাইটেড ত্রিপুরা প্রতিনিধি অনুপম পাল,ত্রিপুরার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর প্রাচীন ঐতিহ্যের অন্যতম মণি হলো ঊনকোটি। এক কোটি থেকে এক কম সংখ্যক পাথরের মূর্তি খোদাই করা এই স্থান শুধু ত্রিপুরার নয়, ভারতেরই একটি বিরল ঐতিহ্য। কিন্তু সম্প্রতি ত্রিপুরা সরকারের পর্যটন প্রচার উৎসবের তালিকা থেকে এই ঐতিহাসিক স্থানের অনুপস্থিতি এক অভূতপূর্ব বিতর্কের সৃষ্টি করেছে।
ঊনকোটি, যার নামই হিন্দু পুরাণ ও লোকগাথার সঙ্গে জড়িয়ে আছে, তার প্রাচীন পাথরের খোদাই করা মূর্তিগুলি ত্রিপুরার ইতিহাস ও সংস্কৃতির গভীরতার সাক্ষ্য বহন করে। কথিত আছে, এক রাতে শিব ও তাঁর সঙ্গীরা এই স্থানে বিশ্রাম নেন এবং শিব তাঁদের এক ভোরে যাত্রা করার নির্দেশ দেন। কিন্তু তাঁর সঙ্গীরা নির্দেশ না মানায় শিব তাঁদের পাথরে পরিণত করেন। এই কিংবদন্তি ছাড়াও ঊনকোটি স্থানীয় সম্প্রদায়ের কাছে ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ত্রিপুরা সরকারের উদ্যোগে ডিসেম্বর মাসে পর্যটন প্রচারের চার দফা উৎসব শুরু হয়েছে। এই উৎসবের উদ্দেশ্য রাজ্যের পর্যটন সম্ভাবনা তুলে ধরা। ডম্বুর হ্রদ, নীরমহল, ভাংমুন ইত্যাদি স্থানের অন্তর্ভুক্তি এই লক্ষ্যপূরণে যথাযথ হলেও, ঊনকোটির মতো ঐতিহাসিক স্থানের অনুপস্থিতি এক বড় প্রশ্ন তুলেছে। অনেকের ধারণা ইচ্ছাকৃতভাবে ঊনকোটিকে অবহেলিত করে রাখা হয়েছে,আর যার পেছনে একটা দুষ্ট মহলের চক্রান্তের আবহ পাচ্ছেন জেলার মানুষ।
বিভিন্ন মহল থেকে এই সিদ্ধান্তের নিন্দা করা হয়েছে। ঊনকোটির প্রতি এই উপেক্ষা শুধু ঐতিহ্যের প্রতি অবিচার নয়, বরং রাজ্যের পর্যটন শিল্পের বিস্তারকেও সীমাবদ্ধ করছে বলে মনে করছেন শুভবুদ্ধিসম্পন্ন জনসাধারণ।
ঊনকোটি একটি প্রত্নতাত্ত্বিক বিস্ময়। ত্রিপুরার পাহাড়ি জঙ্গলের মাঝে এমন বিশাল পাথর খোদাইয়ের কাজ ভারতবর্ষে বিরল। শুধু স্থানীয় পর্যটক নয়, আন্তর্জাতিক পর্যটকদের কাছেও এটি চিরকাল আকর্ষণীয়। ত্রিপুরার বহু মানুষ প্রতিবছর ঊনকোটিতে পুণ্যস্নানে আসেন। অতএব, এই স্থানটির উন্নয়ন ও সঠিক প্রচার কেবল পর্যটনের উন্নয়ন নয়, বরং সাংস্কৃতিক ঐক্যবোধের প্রতিফলনও।
সরকারের পর্যটন নীতির মধ্যে ঊনকোটি অবহেলিত হয়ে আসছে দীর্ঘদিন। অবকাঠামো উন্নয়নে ঘাটতি এবং যথাযথ প্রচারের অভাবে ঊনকোটি আন্তর্জাতিক মানচিত্রে নিজের প্রাপ্য স্থান পায়নি বললেই চলে। যেখানে রাজ্যের অন্য পর্যটন স্থানগুলিকে তুলে ধরতে বিশেষ আয়োজন করা হয়েছে, সেখানে ঊনকোটিকে উপেক্ষা করার কারণ কী? এই প্রশ্ন এখন ঘুরপাক খাচ্ছে সর্বত্র।
ঊনকোটির গুরুত্ব কেবল ত্রিপুরার সীমায় সীমাবদ্ধ নয়,এটি একটি জাতির ঐতিহ্যের গল্প বলে। সরকারের উচিত এই স্থানটির যথাযথ পরিচর্যা ও প্রচার করা। ত্রিপুরার পর্যটন উৎসবের ভবিষ্যৎ পর্বে ঊনকোটিকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া শুধু প্রয়োজন নয়, সময়ের দাবি। কারণ, ঊনকোটি কেবল পাথরের খোদাই নয়,এটি ত্রিপুরার শিকড়, ইতিহাস এবং আত্মপরিচয়ের এক নিরব সাক্ষী।