
Oplus_131072
ঢাকা শহরে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতার মধ্যেই একটি বিতর্কিত দাবি উঠে এসেছে। বিশিষ্ট প্রবাসী সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেন তাঁর ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজে দাবি করেছেন যে, ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের নিচে প্রায় ৩০০ বছর পুরোনো একটি শিবলিঙ্গ পাওয়া গেছে এবং সে অনুযায়ী সেখানে একটি শিব মন্দির নির্মাণের দাবি তুলেছেন তিনি। এই পোস্টটি দ্রুত সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে পড়েছে এবং বিভিন্ন মহলে আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।
এ ধরনের সংবেদনশীল ঐতিহাসিক দাবির ক্ষেত্রে যথাযথ গবেষণা ও প্রত্নতাত্ত্বিক বিশ্লেষণের প্রয়োজন। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদপ্তর বা কোনো স্বীকৃত গবেষণা প্রতিষ্ঠান এমন কোনো প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারের কথা জানায়নি। অতএব, এই দাবি কতটা বাস্তবসম্মত, তা যাচাই করা জরুরি।
ধানমন্ডি ৩২ নম্বর বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান। এটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাসভবন এবং বর্তমানে এটি একটি স্মৃতিসৌধ ও জাদুঘর হিসেবে সংরক্ষিত। এই জায়গার নিচে যদি সত্যিই কোনো প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন থাকে, তবে সেটি রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে গবেষণা ও মূল্যায়ন করা দরকার।
বিভিন্ন বিশ্লেষক মনে করছেন, এই ধরনের দাবির পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকতে পারে। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা বেড়েছে, বিশেষ করে শেখ হাসিনার দিল্লীতে দেওয়া ভাষণের পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন দল ও গোষ্ঠী প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করছে। এরই মধ্যে “মার্চ টু ধানমন্ডি ৩২” কর্মসূচির মতো প্রতিবাদ দেখা গেছে।
এই প্রেক্ষাপটে, ধানমন্ডি ৩২ নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করা এবং তা ধর্মীয় প্রসঙ্গে নিয়ে আসা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার হতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। ধর্মীয় স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো অতীতে বহুবার বিভিন্ন রাজনৈতিক গোষ্ঠী ব্যবহার করেছে, এবং এই ঘটনাও তার অংশ হতে পারে।
বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায় বরাবরই ধর্মীয় সম্প্রীতির পক্ষে এবং এ ধরনের অপ্রমাণিত দাবির বিষয়ে অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। হিন্দু সম্প্রদায়ের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, কোনো প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ ছাড়া এ ধরনের দাবি করা উচিত নয়, কারণ এটি সাম্প্রদায়িক বিভেদ তৈরি করতে পারে।
ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের নিচে শিবলিঙ্গ আবিষ্কারের দাবি আপাতত কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি পাচ্ছে না। এটি শুধুমাত্র সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া একটি তথ্য, যার সত্যতা যাচাই করা দরকার। বাংলাদেশ সরকার ও প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর যদি সত্যিই এ নিয়ে কোনো ঘোষণা দেয়, তবে সেটি অন্য বিষয়।
তবে রাজনৈতিক অস্থিরতার সময় এমন বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে দেওয়া জনগণের মধ্যে অস্থিরতা তৈরি করতে পারে। তাই যেকোনো তথ্য যাচাই-বাছাই না করে বিশ্বাস করা এবং তা প্রচার করা থেকে বিরত থাকা উচিত।