
Oplus_131072
ত্রিপুরা মেডিক্যাল কলেজের ফিজিওলজি বিভাগের প্রধান, প্রফেসর সোমা চৌধুরীর বিরুদ্ধে ভয়াবহ দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ অনুযায়ী, তিনি সরাসরি মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে ছাত্রছাত্রীদের পরীক্ষায় পাশ করানোর আশ্বাস দিতেন এবং অন্যদিকে, ইচ্ছাকৃতভাবে কিছু শিক্ষার্থীকে ফেল করিয়ে সাপ্লিমেন্টারি পরীক্ষায় পাশ করানোর নামে কোটি টাকার আর্থিক লেনদেন করেছেন। এই কেলেঙ্কারির শিকার হয়েছেন বহু শিক্ষার্থী, যারা পড়াশোনার পাশাপাশি এই অমানবিক অর্থ-বাণিজ্যের শিকার হয়ে মানসিক চাপে পড়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষার নামে চলছিল বিশাল দুর্নীতির চক্র। অভিযোগ উঠেছে, শুধুমাত্র গত বছরই প্রায় ১৮ থেকে ২২ জন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয়েছে। প্রতিটি ছাত্রছাত্রীর কাছ থেকে ৫ থেকে ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আদায় করা হয়েছে, যার মোট অঙ্ক দাঁড়িয়েছে প্রায় ১ কোটি টাকা! এর আগেও বহুবার এই ধরনের অনৈতিক কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে সোমা চৌধুরীর বিরুদ্ধে, কিন্তু যথাযথ তদন্তের অভাবে বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে যায়।
শিক্ষার পবিত্রতাকে কলুষিত করে একটি মেডিক্যাল কলেজে এমন ভয়াবহ দুর্নীতি কেবল লজ্জাজনক নয়, এটি ছাত্রছাত্রীদের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলার শামিল। একজন ছাত্রছাত্রী বছরের পর বছর পড়াশোনা করে চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন দেখে, কিন্তু সেখানে যদি পরীক্ষায় পাশ করার জন্য ঘুষ দিতে হয়, তাহলে এটি কেবল শিক্ষাব্যবস্থার জন্য নয়, গোটা সমাজের জন্য এক অশনি সংকেত।
শুধুমাত্র নিজের ক্ষমতা নয়, এই দুর্নীতি কেলেঙ্কারিতে আরও একটি নাম উঠে এসেছে— প্রফেসর সোমা চৌধুরীর স্বামী দীপেন চৌধুরী। তিনি ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজিওলজি বিভাগের প্রফেসর এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের কন্ট্রোলারের সঙ্গে তার সুসম্পর্ক রয়েছে। এই ক্ষমতার সুযোগ নিয়ে তিনি দাবি করতেন যে, যেকোনো শিক্ষার্থীকে পাশ করানো সম্ভব এবং সেই ভরসা দিয়ে ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়া হত। এটি যে পরিকল্পিত একটি দুর্নীতির চক্র, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
এত বড় একটি দুর্নীতির ঘটনা কলেজ কর্তৃপক্ষের অজানা ছিল না। বরং, দীর্ঘদিন ধরে চলা এই অপকর্মের বিষয়ে তারা সব জানতেন, কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেননি। কেন? কারণ, হয়তো তারাও এই দুর্নীতির অংশীদার ছিলেন অথবা কোনোভাবে প্রভাবিত হয়ে মুখ বন্ধ রেখেছিলেন।
সুত্রের খবর অনুযায়ী, এই দুর্নীতির বিষয়টি সামনে আসে যখন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নিজে হস্তক্ষেপ করেন এবং কলেজ কর্তৃপক্ষকে দ্রুত তদন্তের নির্দেশ দেন। মুখ্যমন্ত্রীর কঠোর অবস্থানের ফলে কলেজ অবশেষে স্পেশাল ক্রাইম ব্রাঞ্চে একটি এফআইআর দায়ের করতে বাধ্য হয়েছে বলে জানা গেছে।
বড় কেলেঙ্কারি সামনে আসার পর প্রফেসর সোমা চৌধুরী শেষমেশ পদত্যাগ করেছেন। তবে প্রশ্ন হলো— এই দুর্নীতির শিকার শিক্ষার্থীদের টাকা কীভাবে ফেরত দেওয়া হবে? যাদের অন্যায়ভাবে ফেল করানো হয়েছিলো, তারা কি সুবিচার পাবে? যারা ঘুষ দিয়ে পাশ করেছে, তারা কি চিকিৎসক হওয়ার যোগ্য? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর না পাওয়া পর্যন্ত এই দুর্নীতির সমাপ্তি হবে না।
ত্রিপুরার শিক্ষাক্ষেত্রে এটি সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক দুর্নীতির ঘটনা। সরকারি অর্থ নয়ছয় এবং শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নষ্ট করার পেছনে শুধু একজন নয়, আরও অনেকে যুক্ত থাকতে পারেন। তাই এই তদন্তের গণ্ডি আরও বড় করতে হবে এবং শুধুমাত্র একজন অধ্যাপকের পদত্যাগেই যেন এই ঘটনা ধামাচাপা না পড়ে।
রাজ্যের সাধারণ মানুষ এবং শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের একটাই দাবি— এই ঘটনার সঙ্গে যারা যুক্ত, তাদের দ্রুত গ্রেফতার করতে হবে এবং দুর্নীতির পুরো চক্রকে ধ্বংস করতে হবে। শুধু মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ নয়, জনগণের চাপেই প্রশাসনকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে, নয়তো শিক্ষাক্ষেত্রে এমন দুর্নীতির ঘটনা বারবার ঘটতে থাকবে।
শিক্ষা কোনো পণ্য নয়, আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ব্যবসার জায়গা নয়। এটি ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যৎ গড়ার জায়গা। কিন্তু যদি পরীক্ষায় পাশ করাতে টাকা লাগে, তাহলে প্রকৃত মেধাবীরা ন্যায়বিচার পাবে না। এই দুর্নীতি বন্ধ না হলে, আগামী দিনে ত্রিপুরার চিকিৎসাব্যবস্থা এমনসব ডাক্তারদের হাতে চলে যাবে, যারা টাকার বিনিময়ে ডিগ্রি কিনেছে!
এবার রাজ্যের প্রশাসন ও জনগণের হাতে সিদ্ধান্ত— এই ভয়াবহ দুর্নীতির বিরুদ্ধে কি সত্যিই কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে, নাকি এটি ধামাচাপা পড়ে যাবে?