
আগরতলা,নিজস্ব প্রতিনিধি,ত্রিপুরার রাজনীতিতে নতুন করে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার এবং বর্তমান পর্যটন মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরীর মধ্যে বাকযুদ্ধ ঘিরে। গতকাল ৮০তম জনশিক্ষা দিবসে আগরতলা টাউন হলে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে মানিক সরকার বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে কড়া সমালোচনা করেন। তাঁর অভিযোগ, প্রমো ফেস্ট-২০২৪-এর নামে এক রাতে সাত কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে, যা সম্পূর্ণ জনস্বার্থ বিরোধী।
মানিক সরকার আরও বলেন, “ডাবল ইঞ্জিন সরকারের শাসনে রাজ্যের জনগণ সমস্যায় জর্জরিত। দুর্নীতি এবং অপব্যয়ের জন্য মানুষকে মূল্য দিতে হচ্ছে। দুর্গাপূজা ও কালীপূজার সময় নেতাদের ছবিসহ ফ্লেক্স বানাতে কোটি কোটি টাকা খরচ হয়। আবার বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অপব্যয়ের ধারাও অব্যাহত।”
আজ এক সাংবাদিক সম্মেলনে পর্যটন মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী মানিক সরকারের অভিযোগের তীব্র নিন্দা করেন। তিনি বলেন, “মানিক সরকারের মতো বর্ষীয়ান নেতা এমন ভিত্তিহীন মন্তব্য করছেন, যা তার শোভা পায় না। সিপিআইএমের ২০ বছরের শাসনকালে পর্যটন দপ্তরের কার্যক্রম কার্যত ছিল না। এখন পর্যটন খাতে সাফল্য আসায় তা সহ্য করতে পারছেন না তিনি।”
পর্যটন মন্ত্রীর দাবি, “প্রমো ফেস্ট-২০২৪ সারা রাজ্যে অভূতপূর্ব সাড়া ফেলেছে। এই সফল উদ্যোগ মানুষের প্রশংসা কুড়িয়েছে। কিন্তু সিপিআইএমের মতো ব্যর্থ রাজনৈতিক দল তা মেনে নিতে পারছে না।”
মানিক সরকারের বক্তব্যকে “মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর” আখ্যা দিয়ে পর্যটন মন্ত্রী চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে বলেন, “মানিক সরকার যদি সত্যিই সাত কোটি টাকার অপব্যয়ের প্রমাণ দিতে পারেন, তাহলে তা জনসমক্ষে তুলে ধরুন। অন্যথায়, এ ধরনের বিভ্রান্তিকর মন্তব্য বন্ধ করুন।”
মন্ত্রী আরও অভিযোগ করেন, বাম আমলে পর্যটন খাতে কোনো উন্নতি হয়নি। উগ্রপন্থীদের ভয় এবং অপহরণের আতঙ্কে পর্যটকরা ত্রিপুরার গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে যেতে সাহস করতেন না। বর্তমান সরকার রাজ্যের পর্যটন শিল্পকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে।
পর্যটন মন্ত্রীর দাবি, সিপিআইএমের সংগঠন কার্যত ভেঙে পড়েছে। তাদের নেতারা এখন বিভ্রান্তিকর মন্তব্য করে জনগণের নজর কাড়তে চাইছেন। তিনি বলেন, “মানিক সরকার নিজেই রাজনৈতিক দেউলিয়াত্বে ভুগছেন। দলের সম্পাদক পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে নিজের অবস্থান ধরে রাখতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন।”
ত্রিপুরার বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে মানিক সরকার ও সুশান্ত চৌধুরীর এই পাল্টাপাল্টি বক্তব্য রাজ্য রাজনীতিতে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। একদিকে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী যেখানে বর্তমান সরকারের অপব্যয় নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন, অন্যদিকে পর্যটন মন্ত্রী তা প্রমাণহীন দাবি বলে খারিজ করছেন।
দুই পক্ষের এই বাকযুদ্ধ যে রাজ্যের সাধারণ মানুষের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এ বিষয়ে সাধারণ মানুষের মতামত এবং আসন্ন রাজনৈতিক পদক্ষেপ কী হবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।