
সংবাদ প্রতিনিধি। অনুপম পাল। কৈলাসহর
ত্রিপুরার মাটিতে জন্ম,ঊনকোটি জেলার কৈলাসহরের উত্তর কাচেরঘাটে শৈশব, আর সেখান থেকেই ছুঁয়ে ফেলা বিশ্বের শ্রেষ্ঠতম দুটি বিদ্যাপীঠের আকাশ—এ যেন গল্পের মতো শোনালেও, এটি এখন বাস্তব। কৈলাসহরের অত্যন্ত প্রিয় সন্তান ড. অরিজিৎ দাস ওরফে বাবুন আজ শুধু ত্রিপুরা নয়, গোটা উত্তর-পূর্ব ভারতের শিক্ষাজগতের মুখ উজ্জ্বল করলেন।
আগরতলার বীর বিক্রম মেমোরিয়াল কলেজ (বিবিএমসি)-এর রসায়ন বিভাগের প্রধান ও সহযোগী অধ্যাপক ড. দাসের লেখা একটি অসাধারণ গ্রন্থ ও একাধিক আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রবন্ধ এখন স্থান করে নিয়েছে বিশ্ববিখ্যাত অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বডলিয়ান লাইব্রেরি এবং হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের HOLLIS ডিজিটাল গ্রন্থাগারে। এটি নিঃসন্দেহে এক বিরল সম্মান, যা প্রথমবারের মতো ত্রিপুরা তথা উত্তর-পূর্ব ভারতের এক শিক্ষককে দেওয়া হলো।
ড. দাসের স্বীকৃত গ্রন্থ “Innovative Mnemonics in Chemical Education: A Handbook for Classroom Lectures” কেবলমাত্র একটি পাঠ্যপুস্তক নয়, এটি এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গি—যেখানে Mnemonics বা স্মরণশক্তি বৃদ্ধির কৌশলের মাধ্যমে জটিল রসায়ন শিক্ষাকে করে তোলা হয়েছে সহজ, আনন্দদায়ক ও ফলপ্রসূ। তাঁর গবেষণাগুলিতে উঠে এসেছে হাইব্রিডাইজেশন, চার্জ বিশ্লেষণ, আইইউপিএসি নামকরণের স্মরণযোগ্য পদ্ধতি এবং জৈব যৌগের গঠন চেনার সহজ প্রযুক্তি—যা আজকের ও আগামীর রসায়ন শিক্ষার্থীদের জন্য এক অমূল্য সম্পদ।
এই স্বীকৃতি শুধু একজন শিক্ষকের নয়, এটি এক মনীষার, যিনি নিজের মেধা ও নিষ্ঠার মাধ্যমে কৈলাসহরের গলি থেকে পৌঁছে গেছেন অক্সফোর্ড-হার্ভার্ডের মর্যাদার উচ্চতায়। শহরের যে ছেলেকে সবাই ভালোবেসে ‘বাবুন’ নামে ডাকত, সেই বাবুন আজ আন্তর্জাতিক মানচিত্রে ত্রিপুরাকে স্থাপন করলেন এক অনন্য স্থানে।
এই অর্জন নিয়ে প্রতিক্রিয়ায় ড. দাস বলেন, “এটি আমার জীবনের এক আবেগঘন মুহূর্ত। আমি এই স্বীকৃতি উৎসর্গ করছি আমার ছাত্রছাত্রী, বিবিএমসি-র সহকর্মী এবং ত্রিপুরার সমস্ত একাডেমিক সম্প্রদায়কে। আমি আশা করি, এই সাফল্য আমাদের অঞ্চলের আরও গবেষণা ও উদ্ভাবনাকে অনুপ্রাণিত করবে।”
আজ গোটা কৈলাসহর গর্বিত। উত্তর কাচেরঘাটের প্রত্যেকটি গলি যেন নিজেদের ছেলের এমন উচ্চতর সাফল্যে আলোয় আলোকিত। শিক্ষার জগতে এই এক অনন্য অর্জন আগামী প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণার হয়ে থাকবে।