
Oplus_131072
প্রতিনিধি অনুপম পাল,কৈলাসহর
চন্ডীপুর ব্লকের হাওর অঞ্চল সংলগ্ন মনুনদীর বাঁধ সংস্কার সহ তিন দফা দাবিতে মঙ্গলবার ডলুগাঁও বাজারে আয়োজিত হলো দুই ঘণ্টার গণঅবস্থান। সিপিআই(এম)-এর হাওর অঞ্চল কমিটির উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এই কর্মসূচি চলে দুপুর ১২টা থেকে ২টা পর্যন্ত।
চৈত্র মাসের তপ্ত রোদ উপেক্ষা করে বিপুল সংখ্যক সিপিআই(এম) পার্টি কর্মী, সমর্থক এবং সাধারণ মানুষ অংশ নেন এই গণঅবস্থানে। সভাপতিমণ্ডলীতে ছিলেন পার্টি নেতৃত্ব পদ্মগোপাল সিনহা ও গোলাপ চৌহান। কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন সিপিআই(এম)-এর রাজ্য কমিটির সদস্য বিশ্বরূপ গোস্বামী, মহকুমা সম্পাদক অঞ্জন রায়, নীলকান্ত সিনহা, পরিমল শীল, শৈলেশ মালাকার, বংশীবদন সিনহা এবং বিনয় দেববর্মা।
বিশ্বরূপ গোস্বামী বলেন, “৭০’র দশকে প্রতিবছর বর্ষায় মনুনদীর জলে হাওর অঞ্চলের বিস্তীর্ণ কৃষিজমি ডুবে যেত, মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে রাস্তায় আশ্রয় নিতে বাধ্য হতো। ১৯৭৮ সালে বামফ্রন্ট সরকার ক্ষমতায় এসে মনুনদীর বাঁধ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়। দুই বছরের মধ্যেই প্রায় ৫ কিমি বাঁধ নির্মাণ হয়।” তিনি আরও অভিযোগ করেন, গত সাত বছরে বিজেপি সরকার বাঁধ সংস্কারে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
গণঅবস্থানে উত্থাপিত তিনটি মূল দাবি হলো—মনুনদীর বাঁধ দ্রুত সংস্কার,হাওরের মোহনপুর থেকে বরইতলী কাটানালা ও বাগুয়াছড়া নালা সংস্কার,আবাসন যোজনায় প্রকৃত উপযুক্তদের তালিকা তৈরি করে ঘর প্রদান।
চন্ডীপুর ব্লকের হাওর অঞ্চলকে মহকুমার শস্যভাণ্ডার বলা হয়ে থাকে। এই কৃষিনির্ভর অঞ্চলের ধানই মহকুমার খাদ্যনিরাপত্তার অন্যতম ভিত্তি। তাই কৃষিজমি রক্ষা ও বাঁধ সংস্কারের দাবি ঘিরে এই আন্দোলন ঐতিহাসিক তাৎপর্য বহন করে।
প্রসঙ্গত, ৭০’র দশকে হাওরের বাঁধ নির্মাণের দাবিতে প্রবল গণআন্দোলনের সূচনা করে সিপিআই(এম)। প্রয়াত জননেতা বৈদ্যনাথ মজুমদারের নেতৃত্বে সেই আন্দোলনে মহিলাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো। ১৯৭৪ সালের মার্চ মাসে কাজের দাবির পাশাপাশি বাঁধ নির্মাণের জন্য ডলুগাঁও থেকে পায়ে হেঁটে শহরে মহকুমা শাসকের কাছে ডেপুটেশন জমা দিতে গেলে পুলিশ তাদের আটকায় ও লাঠিচার্জ করে। সেই সময় পার্টি কর্মী নিশি শর্মা পুলিশের মারধরে আহত হন এবং এক চোখের দৃষ্টিশক্তি হারান।
পরবর্তীতে ১৯৭৮ সালে বামফ্রন্ট সরকার গঠনের পর পরের বছর পূর্তমন্ত্রী বৈদ্যনাথ মজুমদারের সক্রিয় প্রচেষ্টায় ডলুগাঁও বাজার থেকে ছনতৈল পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ করা হয়। এর মধ্য দিয়ে হাওরবাসীদের দীর্ঘদিনের দুর্দশার অবসান ঘটে।আন্দোলনকারীরা আশাবাদী, এবারও ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় হাওর অঞ্চলের সমস্যা সমাধানে সরকার এগিয়ে আসবে।