
প্রতিনিধি অনুপম পাল,কৈলাসহর
ত্রিপুরার কৈলাসহর শহরে ঠিকাদারি বাণিজ্যকে কেন্দ্র করে গত কয়েক মাস ধরেই অশান্তি চলছিল, তবে গতকাল রাতের ঘটনা সেই উত্তেজনাকে এক নতুন মাত্রা দিয়েছে। নেতাজি মেমোরিয়াল ক্লাব সংলগ্ন দুর্গাপুর এলাকায় রাত প্রায় ১টা নাগাদ একদল দুষ্কৃতী রাস্তা নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত একটি ভারী যন্ত্রপাতি-সহ গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়। গাড়িটির মালিক ঠিকাদার আব্দুল মান্নান, যিনি পাইতুর বাজার থেকে সোনামারা ছনতৈল ব্রিজ পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণের কাজ করছিলেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাতের নিস্তব্ধতা ভেঙে আচমকা বিকট শব্দ শুনে তারা বাইরে এসে আগুনে জ্বলতে থাকা মেশিনটি দেখতে পান। পাশেই দাঁড়িয়ে থাকা একটি সাদা রঙের ওয়াগনার গাড়িকে আটকানোর চেষ্টা করলে সেটি দ্রুত পালিয়ে যায়। গাড়ির নম্বর সংগ্রহ করে পুলিশকে জানানো হয়েছে।
আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে দমকল দপ্তর, তবে অভিযোগ অনুযায়ী কিছুক্ষণ পরই দুষ্কৃতিকারীরা ফিরে এসে আবারও আগুন লাগায়। শুধু এখানেই শেষ নয়, পরবর্তী সময়ে প্রায় চার-পাঁচ কিলোমিটার দূরে সিঙ্গির বিলে অবস্থিত আব্দুল মান্নানের কার্পেটিং প্লান্টে হামলা চালানো হয়। সেখানে একটি জেসিবি গাড়ি ভেঙে ফেলা হয় এবং বেশ কিছু বিটুমিনের ড্রাম লুটপাট ও ধ্বংস করা হয়। আব্দুল মান্নানের দাবি অনুযায়ী, দুই ঘটনায় তার প্রায় সত্তর লক্ষ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
এই ঘটনার পেছনে পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলে আজ কৈলাসহর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন ঠিকাদার আব্দুল মান্নান। তিনি পাঁচ জনের নাম স্পষ্ট করে উল্লেখ করেন—নীলমণি দাস, রঞ্জিত নমঃ (মতলব), অলক দেব, রত্না দাস ও তকদির আলী। তার বক্তব্য অনুযায়ী, ঘটনার কয়েক ঘণ্টা আগে শ্রীরামপুরে এক গোপন বৈঠকে এই হামলার পরিকল্পনা হয়।
তবে আব্দুল মান্নান যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন তাদের সাথে যোগাযোগ করে তাদের অভিমত জানার চেষ্টা করলেও ৫ অভিযুক্তের মধ্যে শুধু অলক দেব—এর সাথে যোগাযোগ সম্ভব হয়। অভিযুক্তদের মধ্যে অলক দেব তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করে বলেন, তিনি বর্তমানে চিকিৎসার জন্য মুম্বাইয়ে অবস্থান করছেন প্রমাণ চাইলে তার কাছে আগরতলা থেকে মুম্বাই যাওয়ার দিনের ফ্লাইটের টিকিটও রয়েছে।তিনি বলেন,সামাজিক মাধ্যমের মাধ্যমে তিনি জানতে পারেন দূর্গাপুর এলাকায় একটি গাড়ি জ্বালানো হয়েছে। আর সেই গাড়ি উনি সহ আরো ৪ জন জ্বালিয়েছেন বলে আব্দুল মান্নান থানায় অভিযোগ করেছেন। তার বক্তব্য, “আমি মুম্বাইতে থাকাকালীন কীভাবে কৈলাসহরের এই ঘটনার সাথে যুক্ত হতে পারি?” তিনি আরও বলেন, আব্দুল মান্নানের অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। চিকিৎসা শেষে কৈলাসহর এসে তিনি বিষয়টি দেখবেন বলে জানান।
অন্যদিকে আব্দুল মান্নান জানান, বিগত তিন মাস ধরে ঠিকাদারি বাণিজ্য নিয়ে এলাকায় এক অরাজক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। তিনি বলেন, পূর্ত দপ্তরের অফিসে ঢোকাও সম্ভব হচ্ছে না, টেন্ডার নিয়ে দ্বন্দ্ব চরমে। কয়েকদিন আগে প্রকাশ্যে একটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনাও ঘটে, তবে আজ পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি।
এমন পরিস্থিতিতে পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। মান্নান অভিযোগ করেন, পুলিশ চাইলেও নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে পারছে না। যদিও গতকাল পুলিশ জলকামান ও আধা-সামরিক বাহিনী নিয়ে পূর্ত দপ্তরের সামনে উপস্থিত ছিল, যা শহরের ইতিহাসে নজিরবিহীন।
স্থানীয় বাসিন্দারা আশঙ্কা করছেন, পরিস্থিতি যদি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে না আনা যায়, তাহলে আগামী দিনে ঠিকাদারি বাণিজ্য ঘিরে বড় ধরণের সংঘর্ষ হতে পারে।
সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আগেই প্রশাসনের উচিত দুষ্কৃতিকারীদের দ্রুত শনাক্ত করে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া। নইলে কৈলাসহরের মত এলাকায় উন্নয়নমূলক কাজ বন্ধ হয়ে যাবে এবং মানুষের জীবন বিপন্ন হতে পারে।