দ্যা ইউনাইটেড ত্রিপুরা প্রতিনিধি অনুপম পাল,কৈলাসহর থেকে ধর্মনগর যাবার পথে, জাতীয় সড়ক ২০৮(এ)-এর পাশে, এক পুরাতন বটবৃক্ষের ছায়ায় মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে ভোলানাথ বাবার মন্দির। শুধুমাত্র একটুকরো স্থাপনা নয়, এটি স্থানীয় হিন্দু ভক্তদের কাছে অগাধ বিশ্বাসের প্রতীক, যেখানে হৃদয়ের গভীর থেকে মানত করা প্রার্থনাগুলি যেন দেবতার করুণার স্পর্শে পূর্ণতা পায়।
প্রতিবছর মন্দিরের প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে আয়োজন করা হয় মেলা ও পূজার্চনা। ভক্তদের আবেগ, সুর ও আরাধনার স্রোত যেন এক মহোৎসবের রূপ নেয়। এদিন সকাল থেকেই ঠান্ডাছড়ার এই পবিত্র স্থানে হাজার হাজার মানুষের ঢল নামে। গ্রামের মাটির গন্ধ মাখা সরল মানুষের সঙ্গে শহরের কোলাহল ছেড়ে আসা মানুষজন একত্রিত হয় এই দিবসে। সকলের মুখে একই আকুতি, “বাবা ভোলানাথ আমাদের কৃপা করো।”
যুগের বিবর্তনে, এই মন্দিরের ইতিহাসও স্মৃতির গভীরে মিশে আছে। একসময়, কৈলাসহর-ধর্মনগরের জাতীয় সড়ক নির্মাণের সময় মন্দিরটি সরিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব ওঠে। কিন্তু স্থানীয় ভক্তদের অগাধ বিশ্বাস ও প্রতিবাদে সড়ক নির্মাণকারী সংস্থাকে মন্দিরের পাশ দিয়ে রাস্তা নিয়ে যেতে হয়। জাতীয় সড়ক তৈরী হওয়ায় মন্দিরটি রাস্তার অনেকটা নিচের দিকে চলে যায়। এই বিষয়ে রাস্তা নির্মাণকারী সংস্থার সাথে কথা বললে তারা মন্দিরটি সুন্দর ভাবে তৈরী করে দেবে বলে কথা দিলেও সে প্রতিশ্রুতি এখনো বাস্তবায়ন করেনি রাস্তা নির্মাণকারী সংস্থা।
আজ মন্দিরের প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে মন্দির প্রাঙ্গণে কীর্তনের মধুর সুর আর ধূপের গন্ধে পরিবেশ যেন পবিত্র হয়ে উঠেছে। প্রসাদ বিতরণের সময় ভক্তদের চাহনিতে দেখা যায় এক অনির্বচনীয় আনন্দ। তাদের বিশ্বাস—ভোলানাথ বাবার আশীর্বাদে জীবনের সমস্ত বাধা অতিক্রম করা সম্ভব।
ঠান্ডাছড়ার এই ভোলানাথ বাবার মন্দির কেবলমাত্র একটি ধর্মীয় স্থান নয়,এটি মানুষের ঐক্য, আস্থা ও সংস্কৃতির এক অপূর্ব নিদর্শন। সময়ের স্রোতে রাস্তার নিচে থাকা মন্দিরটি হয়তো অবহেলিত, কিন্তু ভক্তদের অন্তরে এ মন্দিরের স্থান চির অম্লান। একটুকরো ইট-পাথরের মন্দির হলেও, এর পেছনে রয়েছে ভক্তি আর ভরসার গভীর মর্মকথা।
ভোলানাথ বাবার কৃপায় এই মন্দিরটি একদিন নতুন রূপে পূর্ণতা পাবে—এ বিশ্বাস নিয়েই ভক্তদের পথচলা। শ্রদ্ধা, বিশ্বাস, আর ভালোবাসার শক্তিতে নির্মিত এই মন্দির আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, ঈশ্বরের পথে ভক্তি আর সত্যের কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকতে পারে না।