
প্রতিনিধি অনুপম পাল,কৈলাসহর
টিবি মুক্ত ভারত গড়ার লক্ষ্যে বর্তমানে ঊনকোটি জেলায় অবস্থান করছে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল। ন্যাশনাল টিবি ডিভিশনের উদ্যোগে শুরু হওয়া “নিক্ষয় মিত্র” কর্মসূচি ইতিমধ্যেই রাজ্যে এক মানবিক আন্দোলনে রূপ নিয়েছে। আগামী ৯ই সেপ্টেম্বর এই কর্মসূচির তিন বছর পূর্তি উপলক্ষে বিভিন্ন স্তরে জোরকদমে চলছে সচেতনতা ও অংশগ্রহণের কর্মসূচি।২০২২ সালের ৯ই সেপ্টেম্বর ভারত সরকার এই কর্মসূচি শুরু করে। এর মূল উদ্দেশ্য, টিবি আক্রান্ত রোগীদের পাশে দাঁড়ানো, পুষ্টিকর খাবার সরবরাহ এবং প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদান করা। একজন সাধারণ মানুষও ‘নিক্ষয় মিত্র’ হয়ে রোগীর পাশে দাঁড়াতে পারেন—এমন অনুপ্রেরণাদায়ক বার্তা দিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী।
রাজ্যে বর্তমানে প্রায় ১৬ থেকে ১৭ হাজার টিবি রোগী সরকারি নথিভুক্ত আছেন। তাঁদের বিনামূল্যে চিকিৎসা দেওয়ার পাশাপাশি সরকার প্রতিমাসে এক হাজার টাকা আর্থিক সহায়তাও প্রদান করছে। পাশাপাশি নিক্ষয় শিবিরের মাধ্যমে নিয়মিত এক্সরে পরীক্ষা, সচেতনতা কর্মসূচি এবং পুষ্টি সহায়তা অব্যাহত রয়েছে।এই অভিযানে সক্রিয়ভাবে যোগ দিয়েছেন বিভিন্ন জনপ্রতিনিধি। ফটিকরায় বিধায়ক তথা মন্ত্রী সুধাংশু দাস, তাঁর মাতা রীনারানী দাস ও বড় ভাই হিমাংশু দাস মিলে পুরো ফটিকরায় বিধানসভার সমস্ত টিবি রোগীর দায়িত্ব নিয়েছেন। একইভাবে পাবিয়া ছড়ার বিধায়ক ভগবান দাস তাঁর বিধানসভার সমস্ত টিবি রোগীর পুষ্টির দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন।
শুধু জনপ্রতিনিধি নয়, সমাজের বিভিন্ন সংগঠন ও সাধারণ মানুষও এগিয়ে আসছেন। লায়ন্স ক্লাব অব কৈলাসহর, জেলা টিবি অফিসার এবং অসংখ্য নাগরিক ইতিমধ্যেই নিক্ষয় মিত্র হিসেবে যুক্ত হয়েছেন। ফলে প্রায় দুই হাজার টিবি রোগীর দায়িত্ব এখন বহন করছেন বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান।
এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল—জাতীয় পরামর্শক ডি ধর্মা রাও ও গঙ্গাধর দাস এবং ওয়াল্ড হেলথ অর্গানাইজেশনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের দায়িত্বপ্রাপ্ত ডাঃ গৌতম—ঊনকোটি জেলার কার্যক্রমে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তাঁরা মন্ত্রী সুধাংশু দাসের বাসভবনে বৈঠক করার পাশাপাশি জেলাশাসকের সঙ্গেও আলোচনা করেছেন।জেলা যক্ষা নিবারণ কেন্দ্রের উদ্যোগে বর্তমানে গ্রামাঞ্চলে নিয়মিত এক্সরে ক্যাম্প আয়োজন করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিরা এই উদ্যোগকে প্রশংসনীয় বলে উল্লেখ করেছেন।
“টিবি হারবে, ত্রিপুরা জিতবে”— এই স্লোগানকে সামনে রেখে ঊনকোটি জেলায় যে কর্মসূচি গড়ে উঠেছে, তা নিঃসন্দেহে গোটা রাজ্যের জন্য এক দৃষ্টান্ত। আগামী দিনে চন্ডিপুরের বিধায়ক তথা মন্ত্রী টিংকু রায় এবং কৈলাসহরের বিধায়ক বীরজিৎ সিনহাও এই কর্মসূচিতে যুক্ত হবেন বলে জানা গেছে।
এভাবে সরকারের সক্রিয় পদক্ষেপ, জনপ্রতিনিধিদের উদ্যোগ ও সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ মিলিয়ে ঊনকোটি জেলায় টিবি নির্মূলের লড়াই এক নতুন মাত্রা পেয়েছে।