✍️ চারুকৃষ্ণ কর,ছৈলেংটা।
ধলাই জেলার লংতরাই ভ্যালীর ছৈলেংটা সরকারি কলেজ স্থাপিত হয়েছিল মূলত জনজাতি ও বাঙালি মিশ্র জনসংখ্যার ছাত্রছাত্রীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগ প্রদানের লক্ষ্যে। তবে স্থাপনার প্রায় ২৫ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও কলেজটি বহু সমস্যায় জর্জরিত।
ধলাই জেলার দুটি সরকারি কলেজের মধ্যে ছৈলেংটা সরকারি কলেজ তুলনামূলকভাবে নবীন। এটি দ্বিতল ভবনে পাহাড়ের সমতল অংশে অবস্থিত। বর্তমানে প্রায় হাজার খানেক ছাত্রছাত্রী এখানে পড়াশোনা করছেন। যদিও শুরুতে ছাত্রসংখ্যা ছিল অতি সীমিত, বর্তমানে এটি লংতরাই ভ্যালীর শিক্ষার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।
কলেজে কলা বিভাগের সাতটি বিষয়ে (বাংলা, ইংরেজি, ককবরক, ইতিহাস, দর্শন, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, এবং শিক্ষা) অনার্স কোর্স চালু রয়েছে। যদিও বিজ্ঞান বিভাগ চালুর জন্য ল্যাবরেটরি স্থাপন করা হয়েছে, তা এখনও চালু করা সম্ভব হয়নি। এর ফলে, বিজ্ঞান নিয়ে উচ্চশিক্ষার ইচ্ছা থাকা বহু মেধাবী ছাত্রছাত্রী বাধ্য হয় অন্য জেলার কলেজে ভর্তি হতে।
অধ্যাপক সংকট:
কলেজে বর্তমানে ১০ জন স্থায়ী অধ্যাপক রয়েছেন, বাকিরা অস্থায়ী ভিত্তিতে কর্মরত। অস্থায়ী অধ্যাপকদের সম্মানী অতি সামান্য, যা তাদের পেশাগত উৎসাহে প্রভাব ফেলছে।
বিজ্ঞান বিভাগের অনুপস্থিতি:
বিজ্ঞান বিভাগের জন্য ল্যাবরেটরি থাকা সত্ত্বেও তা চালু করা হয়নি। উচ্চশিক্ষা দপ্তরের উদ্যোগের অভাবে এলাকার মেধাবী ছাত্রছাত্রীরা অন্যত্র যেতে বাধ্য হচ্ছেন।
প্রশাসনিক কর্মী সংকট:
কেবল ৭ জন প্রশাসনিক কর্মী নিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ কলেজ পরিচালনা করা সম্ভব নয়।
অর্থনৈতিক বৈষম্যের প্রভাব:
অনেক ছাত্রছাত্রী শুধুমাত্র দারিদ্র্যের কারণে তাদের পছন্দের বিষয়ে পড়ার সুযোগ পাচ্ছেন না এবং বাধ্য হয়ে কলা বিভাগে ভর্তি হচ্ছেন।
কলেজটি বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভালো ফলাফল করছে। বিজ্ঞান বিভাগ চালু হলে এটি আরও ভালোভাবে লংতরাই ভ্যালী মহকুমার সুনাম বৃদ্ধি করবে। সরকারের পক্ষ থেকে নতুন অধ্যাপক নিয়োগের যে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে, তাতে এই কলেজের সংকট কিছুটা লাঘব হতে পারে।
উচ্চশিক্ষা দপ্তরের করণীয়:
অবিলম্বে বিজ্ঞান বিভাগ চালু করে ল্যাবরেটরি ব্যবহারের ব্যবস্থা করা।
অধ্যাপক ও প্রশাসনিক কর্মী নিয়োগে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া।
অস্থায়ী অধ্যাপকদের সম্মানী বৃদ্ধি করা।
কলেজের অবকাঠামোগত উন্নয়নে বিশেষ বরাদ্দ প্রদান।
ছৈলেংটা সরকারি কলেজ ধলাই জেলার উচ্চশিক্ষার অন্যতম কেন্দ্র হলেও নানা সমস্যার কারণে এটি এখনও প্রত্যাশিত মানে পৌঁছাতে পারেনি। বিজ্ঞান বিভাগ চালু ও অধ্যাপক সংকট নিরসন হলে এটি মহকুমার মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাকেন্দ্র হয়ে উঠবে। যথাযথ উদ্যোগ ও পরিকল্পনার মাধ্যমে কলেজটি মহকুমার শিক্ষার মান উন্নত করতে সক্ষম হবে।